ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দণ্ডের পর খালেদা কি নির্বাচন করতে পারবেন?

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
দণ্ডের পর খালেদা কি নির্বাচন করতে পারবেন? বকশীবাজার বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়া/ফাইল ফটো

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর দণ্ডের রায়ের পর এখন  জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কী পারবেন না। এ নিয়ে আইনের নানা রকম ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আইনজ্ঞরা। 

যদিও সংবিধান বলছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারো দুই বছরের বেশি সাজা হলে, সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বোচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, চূড়ান্ত আপিলনিষ্পত্তি পর‌্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আবার কারও মতে, এখন পর‌্যন্ত তিনি দণ্ডিত। কোনো আপিল করেননি। সুতরাং, নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। যদি আপিলের পর দণ্ড স্থগিত হয়ে জামিন পান তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতেপারবেন।  

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারো সাজা হয় তাহলে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দু’টি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত বলা আছে যে, আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি, সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও ইলেকশন করতে পারবেন।

আবার আরেকটা রায়ে আছে, পারবেন না। এখন ওনার ব্যাপারে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা…। এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারো দুই বছরের বেশি সাজা হলে, সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। এটাই সংবিধান। তবে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও হাইকোর্ট বিভাগ রয়েছে, আপিল বিভাগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত গিয়ে যদি নিম্ন আদালতের সাজা বহাল থেকে যায় তাহলে তিনি সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।

ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আরও বলেন, তবে নিম্ন আদালতে সাজা হওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করে যদি জামিন ও সাজায় স্থগিতাদেশ পান তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ, আপিল বিভাগে যদি সাজা বহাল থাকে তাহলে নির্বাচিত হলেও সংসদ সদস্য পদে অযোগ্য হয়ে যাবেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আজ পর‌্যন্ত তিনি অযোগ্য। তবে আপিল করার পর যদি দণ্ড সাসপেনশন হয় এবং জামিন পান তাহলে নির্বাচনের অংশ নেওয়ার বিষয়টি আলোচিত হতে পারে। এর আগে নয়।

সংবিধানের পঞ্চম ভাগে ‘সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা’ সংক্রান্ত ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, এবং (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে;’

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  একইসঙ্গে তাদের দেওয়া হয়েছে আর্থিক দণ্ড।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।