সোমবার (৫ নভেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে এরশাদের নেতৃত্বে ছিলেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বেশ কিছু নেতা।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার কোনো ধরনের চেষ্টা হলে তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এরশাদ।
সূত্র জানায়, সংলাপে শেখ হাসিনাকে এরশাদ বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। আপনি যেভাবে যেভাবে যা ভালো মনে করবেন করেন, আমরা আপনাকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছি। আমরা নির্বাচনে থাকবো, যেভাবে একটা ভালো নির্বাচন হবে বলে আপনি মনে করেন, সেটাই করেন। তবে কেউ যদি কোনোভাবে নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার কোনো ধরনের চেষ্টা করে আমরা আপনার সঙ্গে থেকে আপনি যেভাবে চাইবেন প্রতিহত করবো। কোনোভাবেই কারও অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করা যাবে না, আত্মসমর্পণ করা যাবে না। দশম জাতীয় সংসদটা অত্যন্ত ভালোভাবে চলেছে। এই চমৎকার পরিবেশটা অব্যাহত রাখতে হবে। ’
নির্বাচনে সবাই আসুক- এমন প্রত্যাশার কথা সংলাপে প্রকাশের পাশাপাশি এরশাদ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বলেন, ‘একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে সব কিছু যেনো সংবিধানের মধ্যে থাকে। সংবিধানের মধ্যে থেকে যতটুকু ছাড় দেওয়া যায় সেটা দেওয়া যেতে পারে। সবকিছু সংবিধানের মধ্যে থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। ’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা করার সংবিধানের ভেতরে থেকেই করবো। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে আগামী নির্বাচন সেভাবেই হবে। আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। ’
সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেসব দাবি দিয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা উঠলে এরশাদ এ বিষয়ে বলেন, ‘এখানে ৭ দফা, ১১ দফা যাই দেওয়া হোক, সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করা যাবে না। মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ ভাঙার কোনো প্রশ্নই উঠে না। যা কিছু করার সংবিধানের মধ্যে থেকেই করতে হবে। ’
এরশাদ তার কারাজীবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ওপর তারা (বিএনপি) যে নির্যাতন চালিয়েছিল নেত্রী (শেখ হাসিনা) নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। আমার উপহার পাওয়া একটা অস্ত্র ছিল। সেই অস্ত্র নিয়ে আমাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আমার শর্ত ছিল নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, কিন্তু তারা সেটা করেনি। বরং জেলের মধ্যে আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। এমন কি আমার বাথরুম পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করতে দেয়নি। সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিল। আজ তার (বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া) সাজা হয়েছে। নিয়তির বিচার বলে একটা কথা আছে। অনেক অত্যাচার মানুষের ওপর করেছে। আজ তার (খালেদা জিয়া) জেলে যেতে হয়েছে। তার সাজাতো নিয়তিই তাকে দিয়েছে। ’
এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি আপনার উপর কী অত্যাচার হয়েছিল। দেখেন তারা এখন কী সাজা ভোগ করছে। ’
সূত্র জানায়, সংলাপে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে জাতীয় পার্টিকে কয়টি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে সে বিষয়টি পরবর্তীতে বসে চূড়ান্ত হবে বলে উভয়পক্ষই একমত হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বিএনপির নির্বাচনে আসা বা না আসার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দু’পক্ষই।
এ বিষয়ে এরশাদ সংলাপে বলেন, ‘নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবে আমরা আপনার সঙ্গে একমত থাকবো। আমরা আপনার সঙ্গে আছি, থাকবো। তবে আমাদের কিছু দাবি আছে দাওয়া আছে, সেটা আমি পরে জানাবো, আমার প্রতিনিধি জানাবে। ’
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসন শুধু শুধু বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। আমরা ছেড়ে দেবো, আপনার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবে কি-না সেটাও দেখতে হবে। বিজয়ী হতে পারবে এরকম প্রার্থীই মাথায় রাখবেন। আপনারা প্রথমে ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঠিক করেন। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে আপনারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে আলাদা নির্বাচন করবেন। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাহলে আসন সমঝোতা করে জোটবদ্ধভাবেই আমরা নির্বাচন করবো। আমরা আসন ছেড়ে দেবো। ’
সূত্র জানায়, বিগত নির্বাচনে এরশাদের সরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গটিও সংলাপে তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনিতো (এরশাদ) আবার পল্টি খান। গতবার নির্বাচনে যা করলেন, সেটা না করলেতো আরও বেশি আসন পেতেন। ’
এর জবাবে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘নেত্রী অতীত ভুলে গেলেই খুশি হবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৮
এসকে/এমইউএম/এইচএ/
আরও পড়ুন
** ‘সংবিধানের আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি’
** আসন চূড়ান্ত হয়নি: এরশাদ
** ‘সব দল না গেলে আলাদা নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি’
** একসঙ্গে নির্বাচন করবো: কাদের
** ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জাতীয় পার্টি’
** নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক: জাপা মহাসচিব
** অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে