দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্টদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপি, কৃষকদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও।
এসব ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে রোববার (০৩ মার্চ) রাত পর্যন্ত জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলটির অন্তত ৩০জন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি।
এর মধ্যে প্রথমেই বহিষ্কার করা হয় বগুড়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলকে। এর পরপরই শিবগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বিউটি বেগম, একই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম তাজুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলমকে বহিষ্কার করা হয়।
এর মধ্যেই আবার অনেকে নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগেও বহিষ্কৃত হয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মাফতুন আহমেদ খান রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, বগুড়ায় বিএনপির একক আধিপত্য ও বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। আর স্থানীয় এই নির্বাচন বর্জন করলে দুটোই ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে প্রার্থী হয়েছি।
তবে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বহিষ্কৃতরা সুবিধাবাদী। কারণ এই সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়ার জন্যই তারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন।
আর এসব সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের বহিষ্কারে দলে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দলের ৩০জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের খবর তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্যরাও রয়েছেন আতঙ্কে।
অনেকে এই আতঙ্কে নির্বাচনে প্রার্থীদের (যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন) পাশ থেকে সরে আসতে শুরু করেছেন। এমনকি অনেক নেতাকর্মী নিজেদের ভোট থেকে একেবারেই গুঁটিয়ে নিয়েছেন।
কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতেই বিএনপি করায় একাধিক মামলার আসামি হতে হয়েছে। জেল খাটতে হয়েছে বা হচ্ছে। এ মুহূর্তে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে না জানি আবার কোন বিপদ এসে ঘাড়ে চেপে বসে। তাই বহিষ্কার হওয়ার চেয়ে চুপচাপ থাকা ভালো। কেননা রাজনীতিতে শেষ বলে তো কোনো কথা নেই।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, বিএনপি এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচনে প্রার্থী হন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা দলের সেই নির্দেশ না মেনে নির্বাচন করছেন। এ কারণে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
‘এখন দেখা যাক বহিষ্কৃতদের আশেপাশে বা পেছনে কারা থেকে নির্বাচন করেন। সেটাও অনুসন্ধান চলছে। কোনোভাবে দলের কেউ বহিষ্কৃতদের হয়ে নির্বাচনে কাজ করার তথ্য প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২ টি উপজেলার মধ্যে ৯ টি উপজেলায় বিএনপির নেতারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। শুধু শেরপুর, আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বিএনপি থেকে কেউ কোনো পদে প্রার্থী হননি।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় শনিবার (০২ মার্চ) জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডাকা হয়।
সেই সভা থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। সভায় নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের তালিকাও করা হয়। সেই তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর পরই ৩০জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের ঘোষণা আসে।
এরপর থেকেই বহিষ্কার আতঙ্কে দলের নেতাকর্মীরা ওই প্রার্থীদের পেছন থেকে নিজেদের গুঁটিয়ে নেন। আর এতে সঙ্কটে পড়েন নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃতরা।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বাংলানিউজকে জানান, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ৩০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা হলেন- মাছুদুর রহমান হিরু মন্ডল, টিপু সুলতান, গোলাপী বেগম, জিয়াউল হক লিপন, রঞ্জনা খান, নয়ন তারা, অ্যাডভোকেট এ রাফি পান্না, আলেকজান্ডার, একে আজাদ, শাহাবুদ্দিন, মমতাজ আরজু কবিতা, আকতার আলম সেলিম, আলিমুদ্দিন হারুন, নাজমা আক্তার, মাহিদুল ইসলাম গফুর, আবুল বাশার, জাহেরুল ইসলাম, সুলতান আহম্মেদ, জুলেখা বেগম, কোহিনুর বেগম, অ্যাডভোকেট রহিমা খাতুন মেরি, মেহেরুল আলম মিশু, আনোয়ার এহসানুল বাশার জুয়েল, সুরাইয়া জেরীন রনি, তাহমিনা আকতার রুমা ও শ্যামল সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৯
এমবিএইচ/এমএ