ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ভারতে পালাতেই সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে সম্রাট!

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৯
ভারতে পালাতেই সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে সম্রাট! ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

কুমিল্লা: নানা আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান আলীকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত ৯ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের জামায়াত নেতা মনিরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সম্রাট ও আরমানকে আটক করে র‌্যাব।

জানা যায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে ঢাকাতেই অবস্থান করছিলেন সম্রাট।

এ সময় তিনি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিলেন। ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন প্রভাবশালী এক নেতার বাসায়। এরপর সুযোগ বুঝে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা এক সময়ের জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপন করেন।

সম্রাট ও আরমানকে এখান থেকে আটক করার পর নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামটি ভারতের সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি। তাই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই হয়তো এ গ্রামে আত্মগোপন করেছিলেন ক্যাসিনো সম্রাট। আত্মগোপন করে থাকা বাড়ির মালিক তার আত্মীয়।

স্থানীয় আলকাসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এখানে লুকিয়ে রয়েছে তা আমরা বুঝতে পারিনি। এ বাড়ির মালিক এখানে তেমন আসেন না। মালিকের বৃদ্ধ মা বাড়ির ছোট একটি রুমে থাকেন। চৌদ্দগ্রামের ভারত সীমান্ত সংলগ্ন একটি গ্রামে এসে আত্মগোপন করে থাকা মানে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, দেশে কোথাও নিরাপদ স্থান না থাকায় হয়তো ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সম্রাটের। তাই সীমান্তলাগোয়া এ গ্রামে অবস্থান করছিলেন এ ‘ক্যাসিনো গডফাদার’।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চৌদ্দগ্রামে বাড়ি হলেও মনিরুল ইসলাম ফেনীতে থাকেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ফেনী থেকে প্রায়-ই ওই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন তিনি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। দোতলা ওই বাড়িটির মূলফটকও বন্ধ থাকে। পেছনের দরজা দিয়ে ওই বাড়িতে আসা যাওয়া চলতো।

এর মধ্যে শনিবার (৫ অক্টোবর) দিনগত রাত ৯টার দিকে র‌্যাবের কয়েকটি গাড়ি মনিরের দোতলা বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে রাত ১১টার দিকে বাড়ির দোতলার একটি কক্ষ থেকে ক্যাসিনো সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান আলীকে বের করে নিয়ে আসেন র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। পরে দিনগত রাত সোয়া একটার দিকে তাদের নিয়ে ওই বাড়ি ত্যাগ করে র‌্যাবের গাড়ি।

শনিবার সন্ধ্যায়ও মনির চৌধুরী একবার তার ওই বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় একাধিক সূত্র। মনির চৌধুরীর ভাতিজি সামিয়া জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে এ বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। মনির চাচার দোতলা বাড়ি। এ বাড়িতে তিনি থাকতেন কিনা তা আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি মনির চাচা প্রায়-ই আসা যাওয়া করতেন বাড়িতে। গতকাল সন্ধ্যায়ও তাকে দেখা গেছে। রাতে হঠাৎ এ বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এরপরই বাড়ি থেকে সম্রাট ও আরমানকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ’

মনির চৌধুরীর প্রতিবেশী মো. জামাল ও মো. মারুফ জানান, মনিরুল ইসলাম ফেনীতে ব্যবসা করেন। সেইখানেই তিনি থাকতেন। এ বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা ছাড়া কেউ-ই থাকতেন না। কিন্তু তিনি সম্প্রতি বেশি আসা-যাওয়া করতেন।

আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানান, মনির চৌধুরী এক সময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।