ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কৃষিজমি রক্ষা করেই শিল্পায়ন করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৯
কৃষিজমি রক্ষা করেই শিল্পায়ন করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে আমরা শিল্পায়ন করবো, তবে কৃষিকে ত্যাগ করে নয়। কৃষিকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পায়ন করতে হবে। কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ খাদ্য ও পুষ্টির মাধ্যমে কৃষি এবং কৃষক আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।

বুধবার (০৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী কৃষক লীগের দশম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের অধিকার রক্ষা করাই আওয়ামী লীগ সরকারে লক্ষ্য।

কৃষকের কল্যাণে আমরা ক্ষমতায় আসার পর নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। আজ দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কারো কাছে খাদ্যের জন্য হাত পাততে হয় না।  

কৃষিজমি রক্ষা করে কল-কারখানা স্থাপনের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যত্রতত্র কল-কারখানা করা যাবে না। তিন ফসলি জমিতে কখনই না। আমাদের কৃষিজমি বাঁচাতে হবে, মানুষকে খাওয়াতে হবে।

‘ধান কাটা, ধানের চারা রোপণ করা, জমি চাষ-কৃষির সবকিছুকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চাইবো এবং সেই ব্যবস্থা মেনে নিয়েছি। তবে তা অবশ্যই কৃষিজমি রক্ষা করে। ’


কৃষির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষিকে গুরুত্ব দিই। ভবিষ্যতেও কৃষির উন্নয়নে যা যা করণীয় সবই করা হবে।  

কৃষিতে ভর্তুকির ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকসহ বিদেশি দাতা সংস্থার বাধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলেছি, আপনাদের টাকা লাগবে না, নিজের টাকা কৃষিতে ভর্তুকি দিবো।

‘সবকিছুতে সবসময় লাভ দেখলে হয় না, দেশের মানুষ কিসে উপকৃত হবে সেটা চিন্তা করতে হয়। আর আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিই। আমাদের দেশকে কিভাবে উন্নত করা যায়, আমরা সেভাবে কাজ করছি। ’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটু সমস্যা আছে, আমাদের যারা লেখাপড়া শিখে- লেখাপড়া শিখলেই তারা আর মাঠে যেতে চায় না। কৃষকের ছেলে, বাবা কৃষিকাজ করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। অবশ্যই সবার মাঠে যাওয়া উচিত।  

‘যাবে না কেন? কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের- দুই পাতা পড়েই মনে করে আমি কেন যাবো! আমার মনে হয়, ওই চিন্তা থেকে দূরে থাকা দরকার। সে কারণে এবার ধান কাটার সময় আমাদের ছাত্রলীগকে বলেছিলাম, তোমরা ধান কাটতে চলে যাও। কৃষকদের পাশে দাঁড়াও। এতে লজ্জার কিছু নেই। নিজের কাজ নিজে করা লজ্জার কিছু থাকে না। নিজে খাদ্য উৎপাদন করবো নিজের খাবার নিজে খাবো এখানে লজ্জার কী আছে?’

তিনি বলেন, কোনো কাজে লজ্জার কিছু নেই, সব কাজ করার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। আমি বলেছি, প্রয়োজনে আমিও যাবো। আমি আমার গ্রামে বলে রেখেছি, তোমরা যখন ধান কাটবে বা বীজ রোপণ করবে তখন আমায় বলবে, আমি যাবো। আমার এতে কোনো লজ্জা নেই।

শিক্ষিতদের কৃষিকাজে অনীহা দূর করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জায়গাটায় আমাদের কৃষক লীগের একটা ভূমিকা থাকা দরকার। আমি মনে করি, আমাদের স্কুলজীবন থেকে এটা আমাদের অভ্যাস থাকা দরকার।  

‘ছোট বাগান করা, জমি চাষ করা বা যেখানে ফসল উৎপাদন হয় নিজের ফসল ঘরে তোলা। এটা একটা গর্বের বিষয়। তাই এটাকে এভাবে দেখতে হবে, কৃষিকে মর্যাদা দিতে হবে। মর্যাদা না দিলে নিজের পেটের ভাত আসবে কোথা থেকে?’

বিএনপি আমলে সারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৮ জন কৃষক পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর প্রথম কেবিনেটে সারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিই। সারে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এখন সারের জন্য আর লাইনে দাঁড়াতে হয় না।  

এর আগে সকাল ১১ টার কিছু পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং  কৃষক লীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।  

সম্মেলনস্থলে দেশাত্মবোধক ও কৃষক লীগের দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিবেশনা উপভোগ করেন।  

পরে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কৃষক লীগের সাংগঠনিক নেতা শেখ হাসিনা।  

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা। এ সময় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সর্বভারতীয় কিশান সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
এমইউএম/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।