ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বঙ্গবন্ধু কখনও জনগণের পক্ষ ত্যাগ করেননি: সেলিম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
বঙ্গবন্ধু কখনও জনগণের পক্ষ ত্যাগ করেননি: সেলিম

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু কখনও মৌলিকভাবে, স্থায়ীভাবে জনগণের পক্ষ ত্যাগ করেননি এবং এখানেই বঙ্গবন্ধুর শক্তির মূল ভিত্তি। তিনি জনগণের দ্বারাও পরিচালিত হয়েছেন। এমন মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী ডাকসুর প্রথম ভিপি এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।  

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সিপিবি কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।  

কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ইতিহাসের ধারাবাহিকতা উপলব্ধি করে যদি কোনো ব্যক্তি তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সঠিক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে, তখন সে ইতিহাসের নায়ক হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু তার পেটি বুর্জোয়া ভিত্তিকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেই এত বড় নেতা হতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কখনও মৌলিকভাবে, স্থায়ীভাবে জনগণের পক্ষ ত্যাগ করেননি। চূড়ান্ত পর্যায়ের সিদ্ধান্ত তিনি দেশের জনগণের স্বার্থেই গ্রহণ করতেন। ’  
  
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দুজন নেতা ছিলেন, একজন হোসেন সোহরাওয়ার্দী আরেকজন মওলানা ভাসানী। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বুর্জোয়া ধারার এবং মওলানা ভাসানী ছিলেন কিছুটা বামপন্থী ঘরানার। যার ফলে বঙ্গবন্ধুর ভেতরেও এই দুই ধারা দেখা যায়। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটা প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যে বাঙালি জাতির এবং মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না।  মুক্তিযুদ্ধে তিনি যেমন সবাইকে সন্তুষ্ট রেখে একত্রিত করতে পেরেছিলেন। কিন্তু দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রমিকশ্রেণী এবং বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করা যে সম্ভব নয় এটা হয়তো তিনি অনুধাবন করতে পারেননি। ’

কথা বলছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।  ছবি: শাকিল  কমরেড সেলিম বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন- সেলিম, আমাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে বলে তোমার নেতারা আমাকে সাবধান করতে এসেছিল। আমি বলেছি, দাদা আপনারা সাবধানে থাকেন, কোনো বাঙালি আমাকে গুলি করতে পারবে না। আমাকে গুলি করতে বাঙালির হাত কেঁপে উঠবে। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে বুঝতেন। কিন্তু তিনি শ্রেণী ততোটা বুঝতেন না। ’  

‘বঙ্গবন্ধু আমাকে আরো বলেন, সেলিম, মোশতাক খুব সাংঘাতিক লোক, তার থেকে সাবধানে থাকবা। মোশতাকের মাথার ভেতরে পেরেক ঢুকালে, এরপর সেই পেরেক তার মাথা থেকে বের করলে দেখবা, সেটা স্ক্রু হয়ে যাব। তার মাথায় এত প্যাঁচ। আমি বলি, তাহলে তাকে আপনার এত কাছাকাছি রাখেন কেন? তখন তিনি আমাকে বলেন, বুঝলা না কেন কাছে রাখি, কাছে রাখি যেন বেশি দূরে যাইতে না পারে, কোনো ষড়যন্ত্র বা শয়তানি করতে না পারে। কাছাকাছি রেখেও জ়ীবন বাঁচানো গেল না। কারণ এটা ছিলো শ্রেণীশত্রু। ’ 

বর্তমান সরকারি দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের ধারা থেকে আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগের অনেক পার্থক্য। আওয়ামী লীগের শ্রেণী চরিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আগে ছিল মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি দল। এখন আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে লুটেরা শ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত দল। সংবিধানে সমাজতন্ত্র থাকলেও, দেশ পরিচালিত হয় মুক্তবাজার অর্থনীতি দ্বারা। সংবিধানে অসাম্প্রদায়িকতা থাকলেও রাষ্ট্রধর্ম হয়ে যায় ইসলাম। ’  

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে চেতনা এবং আদর্শ নিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই বাংলাদেশ এখনো গড়ে ওঠেনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু সেই বিজয় ধরে রাখতে পারিনি। এরশাদবিরোধী লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করেছি কিন্তু বিজয় ধরে রাখতে পারিনি। সৎ, গণতান্ত্রিক এবং দেশপ্রেমিক শক্তিকে একত্রিত করে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির পুনর্জাগরণ ঘটাতে পারলেই যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
আরকেআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।