ঢাকা: গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনে এখন শুধুই নীরবতা। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ৫ মাস অতিবাহিত হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা দিচ্ছেন না তিনি।
বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, একজন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া কোনো লোকজন নেই। মূল ফটকের বাইরে থেকে বাড়ির ভেতরে কারও আওয়াজও পাওয়া যায়নি। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। ভেতরে দোতলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় থাকছেন খালেদা জিয়া। সঙ্গে আছেন গৃহকর্মী ফাতেমা। এছাড়া নার্স, বাবুর্চি, মালিও রয়েছেন। নিয়মিত ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা দেখাও করেন বলে সূত্র জানায়।
গুলশান এভিনিউয়ের উত্তর মাথায় এমনিতেই মানুষের চলাচল কম। করোনাকালীন চলাচল আরও কমে গেছে। গুলশান স্যুটিং ক্লাব থেকে শুরু হয়ে এক ও দুই নম্বর গোল চত্ত্বর পার হয়ে সোজা উত্তর দিকে যে সড়কটি চলে গেছে সেটির নামই গুলশান এভিনিউ। উত্তর দিকে গিয়ে সড়কটি ডানে চলে গেছে। সর্বশেষ ডানে মোড় নেওয়ার আগের সড়কটির নম্বর ৭৯। এই সড়কে প্রবেশের মুখে বাম পাশের কর্নার প্লটে বৃক্ষবেষ্টিত সাজানো-গোছানো বাড়িটির নাম ‘ফিরোজা’। এটির মালিক বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর ইসলাম।
ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর খালেদা জিয়াকে ওই বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দেন তানভীর ইসলামের বাবা কামরুল ইসলাম। মঈনুল রোডের বাসা ছেড়ে কিছুদিন ভাই শামীম এস্কান্দারের গুলশানের বাসায় ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল ফিরোজায় ওঠেন তিনি। এই বাড়ি লাগোয়া উত্তর পাশের বাড়িটি খালেদা জিয়ার নিজের হলেও সেটি বহুজাতিক একটি কোম্পানির বড় কর্মকর্তার কাছে ভাড়া দেওয়া রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এই বাসা থেকেই গাড়ি বহর নিয়ে গিয়েছিলেন বকশীবাজারের বিশেষ জজ আদালতে। সেদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ছিল। ওই দিনই আদালত তাকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। নিয়ে যাওয়া হয় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। দীর্ঘ দুই বছর একমাস কারাগার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে কারা হেফাজতে থাকেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
এ বছর মার্চ মাসের ২৫ তারিখে সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মী বেষ্টিত গাড়ি বহর নিয়ে গুলশানের ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া। গত ৫ মাস তিনি এখানে অবস্থান করছেন।
ফিরোজা থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। এক এগারো সরকারের পর থেকে এই কার্যালয়ে বসেই দল চালাতেন খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর অদ্যাবধি ওই কার্যালয়ে যাননি চেয়ারপারসন। ২৫ মার্চ ছাড়া পাওয়ার পরও বাসাতেই অবস্থান করছেন তিনি।
ফিরোজার গেটে কথা হয় একজন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএসএফের (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স) ওই সদস্য বলেন, ম্যাডাম ২য় তলায় আছেন। নিচে নামেন না। হাঁটাচলাও তেমন করেন না। অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে তিনি খুব ভালো আছেন। বাইরের লোকজন বাসায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। ভেতরে তার গৃহকর্মীরা আছেন। তিন শিফটে সিকিউরিটি সদস্যরা ডিউটি করেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম ইস্কান্দার, অপর ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের স্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে এই বাড়িতে আসেন। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দোতলায় গিয়ে দেখা করেন। এক সঙ্গে সময় কাটান। এছাড়া স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডনে থাকা ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী-কন্যা, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেন খালেদা জিয়া।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ, একই সঙ্গে বিশ্বমহামারী করোনার কারণে তিনি চান না অযথা কেউ বাড়িতে আসা যাওয়া করুক। সেজন্যই ম্যাডামের বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা কম। তবে পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকগণ তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২০
এমএইচ/এজে