ঢাকা: বাংলাদেশে গুম ও বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার নেতাকর্মীদের ৪০ পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স— এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ, জাতিসংঘের চার্টারে সেটা আছে। অথচ সেটা এখানে অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে। যখন দেখি সেনাপ্রধান আর আইজিপি দুজনে পাশাপাশি বসে প্রেস কনফারেন্স করেন, মেজর সিনহার গুলির পরে— এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কার কাছে যাব, কোথায় যাব, কী বলব?
এই অবস্থার পরিবর্তনে জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে তাই আমাদের মানুষের কাছেই যেতে হবে, তাদের জাগিয়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের এখন যে লড়াই— এই লড়াই, এই সংগ্রাম হচ্ছে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবার লড়াই। এই সংগ্রাম হচ্ছে—আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার লড়াই। এই সংগ্রাম ও লড়াই আমাদের অস্তিত্বকে রক্ষা করবার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের হতাশ হলে চলবে না, এই লড়াইয়ে আমাদের পরাজিত হলে চলবে না। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়লাভ করতেই হবে।
সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, পারভেজ আলম হিরু, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতাকর্মী গুম হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের (গুম হওয়া পরিবার) এই ত্যাগ গোটা জাতিকে নিঃসন্দেহে শক্তি যোগাবে জেগে উঠতে, নিঃসন্দেহে এরা পরাজিত করবে সেই সমস্ত ভয়ংকর দুবৃর্ত্ত, ভয়ংকর দানবদের, যারা জোর করে আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে। এই লড়াইয়ে আমরা জয়ী হব। আমরা এটা বিশ্বাস করি। তা না হলে মানব জাতির ইতিহাস ভুল হয়ে যাবে। জোর করে কেউ টিকতে পারে নাই, নমরুদ পারে নাই, ফেরাউন পারে নাই, হিটলারও পারে নাই। সুতরাং জোর করে কেউ টিকতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্যপ্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ২০১৪ সালে গুম হওয়া এসএম আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী ও কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০০৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সাজেদা বেগম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, এসএম জিলানি, ফখরুল ইসলাম রবিন, গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজ, নজরুল ইসলাম, রফিক হাওলাদার, হারুনুর রশীদ, আজিজুর রহমান মোসাব্বির, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গুম ও খুন হওয়া ঢাকা মহানগরের এসএম আদনান চৌধুরী, কাওসার হোসেন, ডা. সগীর, নজরুল ইসলাম, মো. মজিদ, ঢাকা জেলার ফয়সল উদ্দিন হাশেমী ও মানিকগঞ্জের মো. শাওন—এই সাত পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক সহযোগিতার টাকা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২০
এমএইচ/এমজেএফ