ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

হতাশা বাড়ছে ১৪ দলে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
হতাশা বাড়ছে ১৪ দলে

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে দিন দিন হতাশা বাড়ছে। জোটে থেকেও সরকার ও জোট প্রধান আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের এক ধরনের দূরত্ব থেকে এই হতাশা বাড়ছে বলে শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

শুধু তাই নয়, সরকার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদ্যমান দূরত্বের কারণে জোটের কোনো কোনো নেতা প্রকাশ্যে ১৪ দলের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ ও তাদের মতামত দেওয়ার কোনো পরিস্থিতি জোট শরিকদের নেই। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দিক থেকেও কোনো যোগাযোগ বা প্রয়োজনীয়তা মনে করা হচ্ছে না বলে ১৪ দলের নেতাদের অভিযোগ।

১৪ দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট শরিকদের দূরত্ব চলে আসছে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ১৪ দল সম্পর্কে এই হতাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা আলোচনার মাধ্যমে বের করা যেতে পারতো। শুরু থেকে ১৪ দলের নেতারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের প্রস্তাব দিলেও সরকার বা আওয়ামী লীগের দিক থেকে সাড়া আসেনি।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। এই পদক্ষেপ ১৪ দলের রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসছে। এ সব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জোটের শরিকরা কোনো পরামর্শ বা মতামত দিতে পারছে না। ফলে নেতাদের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে বলে ওই নেতারা জানান।

গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) পার্টির এক অনুষ্ঠানে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ১৪ দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, “১৪ দলের আন্দোলনের ফসল রাজনৈতিক ক্ষমতা এখন দলীয় ক্ষমতায় পরিণত হয়েছে। পত্রিকায় বিবৃতি ও দিবস পালন ছাড়া ১৪ দলের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা এই প্রশ্ন শুধু জনগণেরই নয়, ১৪ দলের নেতাকর্মীদেরও। ১৪ দল কেবল ক্ষমতার রাজনীতির জন্য গঠন করা হয়নি। ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র গঠনের জন্য।

এদিকে ১৪ দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এই জোটের প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান বলে শরিক দলগুলোর নেতারা জানান। তবে শুধু ১৪ দলের শরিকদের নয়, জোট প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগকেও তা উপলব্ধি করতে হবে বলে তারা জানান।

১৪ দলের নেতারা বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দল গঠন হয়েছিলো। ১৪ দলের যে ২৩ দফা তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান ওই ২৩ দফার কোনো কোনো বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ১৪ দলকে কার্যকর জোটে পারিণত করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।

এ সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, “১৪ দল এখন কার্যকর নেই। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দল গঠিত হয়েছিলো। অথচ লুটপাটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িয়ে পড়ছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ১৪ দলের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। তাই ১৪ দল কতটুকু প্রাসঙ্গিক সেটা ভাববার বিষয়। ১৪ দলের ১৩ দলেই এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। ”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বাংলানিউজকে বলেন, “অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি বড় প্লাটফর্ম হিসেবে ১৪ গঠন হয়েছিলো। কথা ছিলো এক সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন করা হবে। ১৪ দলের কেউ আমরা এই সরকারে না থাকলেও এই সরকারকে ১৪ দলের সরকারই মনে করি। যে লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দল গঠন হয়েছিলো তা এখনও পূরণ হয়নি। তাই ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা আছে। আমরা ১৪ দলকে শক্তভাবে দেখতে চাই। এটা আওয়ামী লীগকেও উপলব্ধি করতে হবে। ”

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় বাংলানিউজকে বলেন, “১৪ দলের যে ২৩ দফা ছিলো তার কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি সেটা বলবো না। তবে এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ধর্ষণ, হত্যার মতো যে সামাজিক অবক্ষয় চলছে, জনসচেতনতা তৈরি করে তার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শুধু মৃত্যুদণ্ড আইন করে ধর্ষণ প্রতিরোধ করা যাবে না। ১৪ দলকে সেই জায়গাটাও ধরতে হবে। ”

বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২০
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।