ঢাকা, বুধবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩১, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাঈদ খোকন ও কাদের মির্জার অভিযোগে অস্বস্তিতে আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২১
সাঈদ খোকন ও কাদের মির্জার অভিযোগে অস্বস্তিতে আ.লীগ

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার অভিযোগমূলক বক্তব্য আওয়ামী লীগকে বিব্রত ও অস্বস্থিতে ফেলেছে।

সম্প্রতি তারা দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধে আবারও অভিযোগ তুলেছেন।

একজন অভিযোগ করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে এবং আরেকজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারী দু’জনই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তাদের বক্তব্য দলের ভাবমুর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ফুলবাড়িয়া মার্কেট ও দোকান বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে গত জানুয়ারি থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস এবং সাঈদ খোকনের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ও বাকবিতণ্ডা তৈরি হয়। বিষয়টি আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। এই দোকানগুলো সাঈদ খোকন যখন মেয়র ছিলেন তখন বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠায় বর্তমান এবং সাবেক মেয়র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

সম্প্রতি সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করায় গত ২৯ জুন সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ খোকন বলেন, মেয়র তাপস নগর পরিচালনায় তার সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতে আমার প্রতি বিভিন্ন হয়রানিমূলক আচরণ করে আসছেন। আমি বিশ্বাস করি দুদকের এহেন কর্মকাণ্ড তাপসের প্ররোচনায় সংগঠিত হয়েছে।

এদিকে গত জানুয়ারিতে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ওই সময় থেকে ওই এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। এর আগে সেখানে সংঘর্ষে স্থানীয় একজন সাংবাদিক নিহত হন। এর সূত্রপাত হয় কোম্পানীগঞ্জের বসুহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। কাদের মির্জা পৌর নির্বাচনের সময় নির্বাচনী পরিস্থিতি, দুর্নীতি ও নোয়াখালী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেন।

তিনি বলেছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৩/৪টি আসন ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য এমপিরা পালানোর পথ পাবেন না। তিনি বার বারই জোর দিয়ে এ মন্তব্য করেছেন। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব তৈরি। যা অব্যাহত রয়েছে।

গত ৯ মার্চ কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ভায়াবহ সংঘর্ষ এবং গুলিবিনিময় ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও ৪০ জনের মতো আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল।

গত ২৬ জুন ফেসবুক লাইভে ওবায়দুল কাদেরের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘কী করবেন আমাকে? জেল দেবেন, দেন। অভ্যাস আছে। আমনেও রেডি অন, সময় মতো যাইবেন। আমনে আমারে ঢুকাবেন, আমনে বুঝি বাঁচি যাইবেন। আঁরে মারি আলাইবেন। আমি রেডি করি যামু। কারে রেডি করি যামু বলতে পারবো না। তিনজনের নাম বলেছি। আমাকে মারলে, তিনজনকে মেরে ফেলবি। আপনে, আপনার বউ আর একরাম। তিনটা মারি ফেলবি। জেলে দেক, আমাদের হত্যা করবে বলে হুমকি দিছে বলে আর বিরুদ্ধে মামলা করুক, করবে জানি। ’

দলের এই নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে এ ধরনের অভিযোগ, দ্বন্দ্ব ও বাকবিতণ্ডা আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর ও অস্বস্থির বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। তবে এদের থামানো বা বিরাজমান দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।  

দলের শীর্ষ পর্যায় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে তাদের মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নিরসন করে দেওয়া উচিত বলে দলের নেতারা মনে করেন।

যদিও বিষয়গুলো নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ অস্বস্তি রয়েছে কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।

নেতারা জানান, এই অভিযোগগুলো যাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে বা যাদের নাম আসছে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তাই এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  
কোম্পানীগঞ্জের বসুহাট পৌরসভার মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

আর মেয়র তাপস এবং খোকন দু’জনই আওয়ামী লীগের নেতা। তাপস আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবং এর আগে তিনি ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন। সাঈদ খোকনও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মেয়র তাপস বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি ছেলে। আর সাঈদ খোকনের বাবা মোহাম্মদ হানিফ অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন ছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় সরকারের সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামালায় দলের যে নেতারা মানব ঢাল তৈরি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ঘিরে রেখেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ তাদের মধ্যে অন্যতম। ওই সময় গ্রেনেডের আঘাতে মোহাম্মদ হানিফ গুরুতর আহত হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, যারা এসব অভিযোগ করে যাচ্ছে এটা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়। এটা আওয়ামী লীগে কোনো প্রভাব পড়বে না। তাদের এসব বক্তব্য দলের নেতাকর্মী এবং জনগণ বিচার করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২১
এসকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।