লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া কর্মীরাই ওই কমিটিতে শীর্ষ পদ পেয়েছেন।
ইউনিয়নের বর্তমান আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে লিখিতভাবে এসব অভিযোগ করেন। অভিযোগের স্বপক্ষে তারা বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। অর্থের বিনিময়ে উপজেলা ছাত্রলীগ এ কমিটি দিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ওই কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, 'নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও তাদের পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। '
তবে অভিযোগগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করে বিষয়টিকে চক্রান্ত বলছেন উপজেলা ছাত্রলীগ এবং ওই ইউনিয়নের নবগঠিত কমিটির নেতারা।
জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট এক বছর মেয়াদী নতুন আরেকটি কমিটি অনুমতি দেয় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল হাসান ফয়সাল মাল ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শুভ। এতে আগের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন কমিটির সভাপতি হলেন, শাকিল পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মুসলিম ভুঁইয়া জুয়েল।
নতুম কমিটির শীর্ষ এ দুই নেতা এবং সহসভাপতি তোফায়েল আহম্মদ তপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন মজুমদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ কাউসার গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এবং তার পক্ষে ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে পোস্ট করেন তারা। এদের কারো ছাত্রত্ব নেই বলে অভিযোগ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. সোহেল পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে দল থেকে আমাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন ছাত্রলীগে বর্তমান কমিটিতে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এরা নৌকাকে পরাজিত করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. হোসেন রানা (প্রতীক-ঘোড়া)। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। কিছু নেতা আবার নৌকার বিরুদ্ধে ছিলেন। আমি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হওয়ায় রানা ক্ষিপ্ত হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পদ পাইয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে উপজেলা ছাত্রলীগকে মোটা অংকের টাকা দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
একই কথা জানান নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মোরশেদ আলম। তিনি বলেন, দলের লোক হয়ে যারা দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তারা ছাত্রলীগের পদ পেয়েছেন। আর যারা নৌকার পক্ষে কাজ করে নৌকাকে বিজয় করেছেন, তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর ঘোড়া প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তারাই পদ পেয়ে পুরস্কৃত হয়েছে। ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করলে সম্মেলনের মাধ্যমে দলের জন্য নিবেদিত এবং প্রকৃত ছাত্রদের মাধ্যমে কমিটি দিতে পারতো। কিন্তু নতুন কমিটির শীর্ষ নেতারা দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। সভাপতি শাকিল পাটওয়ারী মাদকাসক্ত। তার হাতে মদ এবং বিয়ারের বোতলের ছবি আছে। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকের ছাত্রত্ব নেই। টাকার বিনিময়ে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. হোসেন রানা বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের পর থেকে আমি ঢাকাতে আছি। ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে যারা আসছে, তাদের আমি ভালোভাবে চিনিও না। তাই কমিটি আনতে টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে এলাকায় কুৎসা রটানো হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে নতুন কমিটির সভাপতি, সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ইউপি নির্বাচনে আমরা নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। কিন্তু চেয়ারম্যানের সঙ্গে চলাফেরা না করায় তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আমাদের সবার ছাত্রত্ব আছে। পদ নেওয়ার আগে আমরা উপজেলা ছাত্রলীগের কাছে সিভি জমা দিয়েছি। যাচাই-বাছাই করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে কোনো টাকা লেনদেন হয়নি। '
এ তিন নেতা কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সে বিষয়ে জানতে চাইলে বলতে অনীহা প্রকাশ করা হয়।
জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শুভ বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো অছাত্র কমিটিতে আসতে পারে না। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা আছেন, তারা সবাই ছাত্র। এছাড়া কমিটি দিতে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন করা হয়নি।
নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নৌকার বিপক্ষে যারা ভোট করবে, তাদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। নতুন কমিটিতে বর্তমান চেয়ারম্যানের পছন্দের লোক না দেওয়ায় তিনি এখন অভিযোগ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
আরএ