ঢাকা: কেবলমাত্র একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান সংকটের সমাধান দিতে পারবে না, আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার বলে উল্লেখ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, প্রথমত বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণের রূপরেখা ও করণীয়; সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বৃহত্তর ঐক্য’ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে গণসংহতি আন্দোলন।
প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। সঞ্চালনা করেন সম্পাদকমণ্ডলীল সদস্য জুলহাসনাইন বাবু। প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ ও তাসলিমা আখ্তার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ২০১৮ সালে আগের রাতেই এক নজিরবিহীন ভোটডাকাতির মাধ্যমে এক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে তাদের নাগরিকত্বের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে এই সরকার।
গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, হয়রানি, জেল-জুলুমের মাধ্যমে বিরোধিতাকে দমন করা হচ্ছে। মানুষের জান-জবানের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে মানুষ সমালোচনা করতেও এখন ভয় পায়। নজরদারি এমন চূড়ান্ত আকার নিয়েছে যে প্রত্যেক নাগরিকই আজ ভীতসন্ত্রস্ত। আর গোটা জনগণকে এরকম পরিস্থিতে রেখে গুটিকতক লুটেরাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে লুণ্ঠনের স্বর্গরাজ্য।
এই একই ধারাবাহিকতা আমরা দেখব বর্তমান সরকারের নির্বাচন কমিশন গঠনের তৎপরতার ভেতরেও। বর্তমানে আর্ন্তজাতিক চাপ থাকায় সবকিছু আইনি প্রক্রিয়ায় হচ্ছে—এরকম একটা ধারণা দেবার জন্য তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশন আইন করে তাদের চলমান তৎপরতাকে বৈধতাদানের চেষ্টা চলছে। অথচ বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা স্পষ্টতই বলে, এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংস্কৃতির এমন কোনো বিকাশ ঘটেনি যে, একটা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।
অতীতের মতোই এই সরকারের অধীনেও গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ। এই সরকার এমন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন তৈরিতে যে আইনই বানানো হোক তা থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর হতে বাধ্য। যে সংসদ নিজেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তা আইন করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে এটা নিতান্তই কষ্টকল্পনা।
সরকার আগামী নির্বাচনও তার ২০১৪, ২০১৮ নির্বাচনের ছকেই করতে চায়। কাজেই এই সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গঠিত একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনেই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সক্ষম নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে পারে।
বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলন উত্থাপিত আশু করণীয়:
১। বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই সরকারের কাজ হবে:
ক. রাজনৈতিক ঐকমত্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, একটি সুষ্ঠ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
খ. রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর অর্থ্যাৎ জবাবদিহিতাপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য তৈরি করা যাতে পরবর্তী গ্রহণযোগ্য সংসদে এই সংস্কার সম্পন্ন করা যায়।
আগামী ৩টি জাতীয় নির্বাচন এইরকম অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি যাতে করে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আস্থা থাকে এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ার প্রয়োজনীয় সময় মেলে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো প্রশ্নে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমের সাবেকী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মডেল বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
আরকেআর/এমজেএফ