ঢাকা: আগামী মে মাসের মধ্যে জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথমেই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলের সাংগঠনিক কাজ আগেই গুছিয়ে রাখতে চান তারা। এর অংশ হিসেবে প্রথমেই দলের জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সেসব জায়গায় তারা দ্রুত সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী মে মাসের মধ্যে এই সম্মেলনের কাজ শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এপ্রিলে যেহেতু রোজা শুরু হচ্ছে তাই ২১ ফেব্রুয়ারি পর থেকে এই কার্যক্রম শুরু করে আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, মহানগর পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছর ডিসেম্বর অথবা পরের বছর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলের জাতীয় সম্মেলনের পর এই এক বছর নির্বাচন কেন্দ্রিক কার্যক্রম চালাবে আওয়ামী লীগ।
দলটির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তিন বছর অন্তর সম্মেলনের সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সম্মেলনের আগে মাত্র তিনটি জেলা সম্মেলন হয়। তখন অধিকাংশ জেলায়ই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এরপর ২০২০ সালের শুরুতে সব পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শুরু করলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় দুই বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম অধিকাংশ সময়ই বন্ধ এবং কখনও সীমিত পরিসরে চলে। যার ফলে সম্মেলন কার্যক্রম পুরোপুরি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এর মধ্যেও কয়েকটি জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে কিছু সম্মেলন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলা সম্মেলনই বাকি রয়েছে। উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে ৬৫০টি। এর মধ্যে ৪৫০টির কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব কমিটির মধ্যে কোন কোনোটির ৮, ১০ বছর বা এক যুগও পার হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি কমে আসায় শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পাবনা জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) নাটোর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দলীয় নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান আছে। আজ (শনিবার) পাবনা জেলা কমিটির সম্মেলন হচ্ছে, এখানে আমি আছি। আগামীকাল (রোববার) নাটোর জেলা সম্মেলন। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের ৮টি বিভাগীয় টিম সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। যেখানে যেখানে সম্মেলন করার প্রয়োজন সেখানে শিগগিরই আমরা সম্মেলন করে ফেলব। ’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার যে নির্দেশ দলের সভাপতি দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারির পর জোরেশোরে শুরু হবে। সামনে রোজার মাস, তখন সুবিধামত সময়ে সম্মেলনের কাজ হবে যদি সংশ্লিষ্টরা করতে চায়। আমরা সরাসরি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ, বৈঠক করছি, আবার ডিজিটাল পদ্ধতিতেও করা হচ্ছে। আমাদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমরা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করব, আবার সরাসরি তো হবেই। করোনা পারিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক হয়ে আসছে, আমরা আগামী মে মাসের মধ্যে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির জাায়গায় সম্মেলন শেষ করব। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দলের সব পর্যায়ে যোগ্য সংগঠক, সৎ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এ ধরনের ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসকে/এমএমজেড