ঢাকা: আর সময় নেই, রাজপথে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলেতে অতিদ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সময় খুব কম। আমাদেরকে দ্রুত নিজেদেরকে সংগঠিত করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে এই ভয়াবহ সরকার যারা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে, তাদেরকে সরাতে হবে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মরণ করে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণায় আমরা সবাই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। দেশনেত্রীকে মুক্তি করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে নিয়ে আসি এবং সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ’ দেশে এখন যে অবস্থা বা সঙ্কট চলছে তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব রাজনৈতিক দল ও মতকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের যে আলাদা সত্ত্বা, যে আলাদা পরিচিতি-অস্তিত্ব আছে সেটাকে ধবংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন সত্যিকার অর্থেই একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেখুন এই সরকার আসার পর থেকে আমাদের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সেটাকে ভেঙে ফেলেছে, আমাদের যে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল সেই ব্যবস্থাকে তারা ভেঙে ফেলেছে, আমাদের জনগণের যে ভোটের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকবার যে অধিকার, তাদের ন্যূনতম কর্মসংস্থানের অধিকার তা তারা ধবংস করে দিচ্ছে। তারা সারা দেশকে লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেছে। একে একে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, একে একে স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থনীতিকে তারা একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন দুর্নীতিতে দেশ এখন ভরে গেছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) যে কর্মকর্তা যিনি অনেকগুলো দুর্নীতি মামলা দেখেছেন তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুদককে পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা কথা বলছেন সেই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে গেছে। সেই ফোনালাপে বলা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় যিনি এই সরকারের অনেক বেতন পাওয়া একজন উপদেষ্টা তার একটা প্রকল্প পাস করার জন্য মন্ত্রী কথা বলছেন উপদেষ্টার সঙ্গে এবং সেখানে দুই বিচারককেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সচিবালয়ে ফাইল মুভমেন্ট করার কথা বলা হয়। আমরা সুস্পষ্ট করে বলেছি, এই কথোপকথনের মধ্যে কী আছে তা জানতে চাই। এই কথোপকথনের মধ্যে যে বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে সেই বিষয়ের তদন্ত চাই। এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। নইলে জনগণের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ওমিক্রনের নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ এক মাস পর এই প্রথম বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় জড়ো হয়। হলের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড