লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আটরশির মুরিদ কাজী জামশেদ কবির বাকী বিল্লাহর বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ী পরিবারকে হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ আতঙ্কে ব্যবসায়ী পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রায়পুর আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী পরিবার এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইফুদ্দিন নয়ন, তার ভাই দলিল লেখক কামাল উদ্দিন বাহার, পরিবারের সদস্য খালেদা আক্তার, নাজমুন নাহার, শাজেদা আক্তার ও সাহেদা আক্তার। এসময় স্থানীয়রাও উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও বাকী বিল্লাহ নিজেকে জেলা জাকেরপার্টি নেতা হিসেবে দাবি করেন। প্রতিরাতেই নিজ কার্যালয়ে ভক্তদের নিয়ে আসর বসান। তিনি এর নাম দেন জলসা ঘর। তার ভক্তরা প্রতিরাতেই নগদ টাকা, গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন নজরানা দেয়। এছাড়া তার নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা বাকী বিল্লাহ আটরশির মুরিদ দাবিদার। তিনি রায়পুর পৌর শহরে নয়নদের জমিতে আটরশির ওরসের জন্য গরুর প্যান্ডেল করতে চেয়েছিলেন। এতে বাধা দেওয়ায় বাকী বিল্লাহ প্রকাশ্যেই তাকে মারধর করে। ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সিএনজি স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যায় নয়ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এদিকে তাকে বাকী বিল্লাহর মারধরের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে তথ্যবহুল সংবাদ পরিবেশন হয়। কিন্তু বাকী বিল্লাহর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রায়পুর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার সময় বাকী বিল্লাহ নিজেই ব্যবসায়ী নয়নকে মারধর করেন। একপর্যায়ে লোকজন নিয়ে তাকে মারতে মারতে ঘরের ভেতর নিয়ে যান তিনি। ঘরের ভেতর ভাঙচুর শেষে আওয়ামী লীগ নেতা তার লোকজন নিয়ে বের হয়ে যান। যাওয়ার সময় নয়নের ভাই বাহারকেও হুমকি দিয়ে যান।
এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শুনে বাকী বিল্লাহ নিজে ও বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবসায়ীকে হত্যা ও পরিবারের সদস্যদের মাধরসহ বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন।
ওই পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। যে কোনো সময় বাকী বিল্লাহ তাদের ক্ষতি করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে তারা স্থানীয় এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
নয়নের ভাই কামাল উদ্দিন বাহার বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে বাকী বিল্লাহ আটরশির ওরসের জন্য গরুর প্যান্ডেল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে তাকে প্যান্ডেল তৈরি করতে দেওয়া হয়নি। এতে তিনি আমার ভাইকে মারধর করেন। ঘরে ভাঙচুর করেন। আমি উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখি। আমাকে সেখানে থেকে লাথি মেরে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। দীর্ঘদিন ধরে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বাকী বিল্লাহ প্রভাব খাটিয়ে আসছেন।
বক্তব্য জানতে আওয়ামী লীগ নেতা বাকী বিল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রায়পুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলী পাটওয়ারী বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিস্তারিত জানা নেই। তবে অভিযোগটি উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাসিমুল হক ইমরান তদন্ত করছেন। তিনিই বিস্তারিত বলতে পারবেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া ও এসআই নাসিমুল হক ইমরান নোয়াখালীতে পুলিশের একটি সভায় থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে জেলা জাকের পার্টির সভাপতি আজাদ হোসেন বাঙালি বলেন, কাজী জামশেদ কবির বাকী বিল্লাহ জাকের পার্টির কোনো পদে নেই, তিনি সদস্যও নয়। বিগত ১৫ বছর আগে অনিয়মের কারণে দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২
জেডএ