ঢাকা: শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নাগরিক ঐক্য ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর ভাটারায় সমাবেশে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হবে।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মান্নাসহ নাগরিক ঐক্যের নেতারা সন্ধ্যায় তোপখানা রোডের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মান্না বলেন, আমরা কয়েকদিন আগেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমাদের মহানগর উত্তর কমিটি এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। অনুমতি নেওয়া হয়নি দাবি করে পুলিশ আমাদের সভার জন্য নির্মিত মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। তবে আমরা অনুমতির জন্য থানায় গিয়েছি- ওসি বলেছেন ডিসিকে লিখতে হবে। দরখাস্ত জমা দেওয়ার জন্য রাজ্জাক সজিব দরখাস্ত নিয়ে দুই ঘণ্টা বসেছিলেন। দরখাস্ত দেওয়ার পরে সেখান থেকে বলা হয়েছে অফিসার সাহেব বলবেন। দু’দিন পরে আবার যোগাযোগ করলে বলা হয় কমিশনার সাহেব বলেছেন থানায় যোগাযোগ করতে। থানায়তো আগেই বলেছি, যখন রাজ্জাক সজিব থানায় গেছে তখন থানার বক্তব্য ছিল, আমাদেরতো কিছু করার নেই। আমরা চাই আপনারা কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা ৩ দিন ধরে প্রচার করছি। পোস্টার, লিফলেট বিলি করেছি। মাইকে প্রচার হয়েছে। কিছু হয়নি। আজকে যখন সকালে মঞ্চ বানানো অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে তখন পুলিশ গিয়ে গালাগালি করে মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে।
মান্না আরও বলেন, আমাদের যারা ছিলেন তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বোঝাতে চেয়েছিলেন। তখনই হামলাটা হয়েছে। এসময় আমাদের রাজ্জাক সজিব, অফিস সহকারী কামরুলসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজ্জাক সজিব গুরুতর আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বিকালে আমি, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকিসহ সবাই যখন গেলাম দেখলাম মঞ্চের কোনো চিহ্ন নাই। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। কাউকে সমাবেশে আসতে দেয়নি। ছাত্র লীগের মিছিল চলছে। পরিস্থিতি দেখে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই হামলা হলো। প্রথম দফায় পুলিশ কিছুটা ঠেকিয়েছে। তৃতীয় দফায় লাঠি নিয়ে এসেছে। কারা হামলা করেছে সবাইকে চিনি। ঢিল ছুড়েছে। লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। সেই সময় আমাদের যারা আহত হয়েছেন তারা হলেন, আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, শহিদুজ্জামান, মহিদুজ্জামান, খালেদ হোসেন শান্ত, আব্দুল মতিন কামরুল।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেছি। আমরা যারা এখানে উপস্থিত আছি অবশ্যই আমরা এই সরকারকে পছন্দ করি না। আমরা মনে করি তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে, তাদের চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা জামায়াত-শিবিরও নই, আমরা কোনো ভায়োলেন্ট রাজনীতিও করি না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করি। আপোস করে আন্দোলন করবো না। যারা হামলা করেছে তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছে। আর বলেছে আমরা জামায়াত-শিবির রাজাকার। আমাদের সঙ্গে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম আব্দুর রব ছিলেন, আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আর তারা বলছে রাজাকার।
তিনি বলেন, এত বড় ঘটনা যেহেতু ঘটলো আমরা এটার প্রতিবাদ করবো। ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শক্তি গড়ে তুলতে হবে। আজকের এই ঘটনার প্রতিবাদে ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবো। এই প্রতিবাদের সঙ্গে আন্দোলনটাকে সামনে আরও গুছিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা শহরে যেখানে যেখানে পারি জনসভা করবো। আমি তারিখ ঘোষণা করছি না, কিন্তু তারা যা ইচ্ছা তাই করবে আর আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো তা হবে না। আমাদের প্লান আছে আমরা ভাটারাতেই আবার জনসভা করবো। দেখি কি করতে পারে, কি হয়? শহরের অন্য জায়গায়ও করবো, ঢাকার বাইরেও করবো।
এছাড়া লেখক মোস্তাকের স্মরণে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় গণস্বাস্থ্যের অডিটরিয়ামে সভা করবো সেখানেও প্রতিবাদ জানাবো।
সারাবিশ্ব সরকারকে দেশের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে দাবি করে মান্না বলেন, ওনারা আমাদেরকে শুধু প্রেসক্লাব আর শাহবাগ চত্বরে বন্দি করে রাখবেন সেটা হতে পারে না। আমরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় সভা করবো। আমরা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে একটি আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আরও বৃহত্তর ঐক্য করে যেন সামনের দিকে যেতে পারি, হয়তো আজকের এই ঘটনা আমাদেরকে সেই কাজে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করবে, শক্তি যোগাবে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, অনুমতি নেওয়া হয়নি মানে তারা দেয়নি। আমরা অবগতির জন্যে দরখাস্ত করেছিলাম এবং বলেছিলাম আপনারা যা করার করবেন। সেটা তারা ডিসির কাছে পাঠিয়েছে। ডিসি আমাদের বলেছে অনুমতি থানা দেবে। আপনারা সবাই জানেন ওরা ভোর বেলা অনুমিত দেয়। তখন সভা করবো কিভাবে। সুতরাং আমাদের প্রস্তুতি চালাতে হয়েছে। যেহেতু প্রচারে তারা কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করেনি। আমরা ধরে নিয়েছি এরকম হবে। আর একটা কথা বলি, এখন পরিস্থিতির কারণে পুলিশ প্রশাসন বহু জায়গায় না ও বলে না, হ্যাঁ ও বলে না। এরকম একটা টোন আমরা পেয়েছিলাম। সেটাও বড় কথা না। সবচেয়ে বড় কথা একুশের শহীদদের স্মরণে সভা করবো সেটার জন্য থানার ওসির অনুমতি কেন নিতে হবে?
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, নঈম জাহাঙ্গীর, কামরুজ্জামান ফিরোজ, শহিদুল্লাহ কায়সার, মোফাখ্খারুল ইসলাম নবাব, রাখি বেগমসহ নাগরিক ঐক্যের নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
এমএইচ/এনএইচআর