ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

অনলাইনে অপপ্রচার রোধে কর্মীদের তৈরি করছে আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
অনলাইনে অপপ্রচার রোধে কর্মীদের তৈরি করছে আ.লীগ

ঢাকা: সামাজিক মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সর্বস্তরের কর্মীদের ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার কাজ করছে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটি।

শুধু তাই নয়, তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষতা তৈরির মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপকমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর।

বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাকারে আওয়ামী লীগের এই নেতা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে ততই জঙ্গিগোষ্ঠী, বিএনপি, জামায়াত-শিবির, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বিভিন্নভাবে তাদের অপপ্রচার, তৎপরতা বাড়াতে থাকবে।

সাক্ষাৎকারে তিনি দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে সেমিনার, কর্মশালার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে এই কমিটি কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন।

আব্দুস সবুর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর উপকমিটি গঠন করা হলে আমরা কাজ শুরু করি। আমরা অনেকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। যেমন- ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচার কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালা করেছি। এরপর আমরা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সব সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে সভা করি। ’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে আমাদের কর্মকৌশল যাতে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, আমরা যাতে তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক উন্নত করতে পারি, যে কোনো অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে ধরতে পারি—সেটার ওপর সভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। এরপর সারাদেশে আমরা ধারাবাহিকভাবে ৭০টির মতো কর্মশালা করেছি। এর মধ্যে বিভাগীয় কর্মশালাও রয়েছে। ’

আব্দুস সবুর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সবাইকে নিয়ে কর্মশালা করেছি। বিভাগীয় কর্মশালার পাশাপাশি জেলা পর্যায়েও এ ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি আমরা আরও আয়োজন করবো। আওয়ামী লীগ পরিবর্তনের আধুনিকতা ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। ’

অপপ্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছাড়াও রামুতে, কক্সবাজারে, বোরহানউদ্দিনে, এমনকি কিছুদিন আগে কুমিল্লায় অপপ্রচারের মাধ্যমে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশ যত এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াত এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। ’

‘সেই জায়গায় আমরা চাই দেশের মানুষ যাতে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়, আমরা যাতে জনগণকে সঠিক তথ্য জানাতে পারি। এই প্রেক্ষাপটে আমরা এসব কাজ করছি। বর্তমানে তৃণমূলের কর্মীরা ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে কনটেন্ট তৈরি এবং শেয়ারের কাজ করছে। তারা অনেকটা প্রশিক্ষিত হয়েছে। তবে আমরা কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছাইনি। ’

কর্মশালার ছবি

অপপ্রচার কেন হচ্ছে জানতে চাইলে আব্দুস সবুর বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি চায় না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। ওরা বুঝতে পেরেছে জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, জনগণ তার সঙ্গে আছে। সুতরাং তারা চাইছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে। যাতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। ’

আর এটা করতে পারলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ  সামনে রেখে, শেখ হাসিনার অর্জনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবো। ’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না বিএনপি আর জামায়াতের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে। বিএনপি, জামায়াত, জঙ্গিগোষ্ঠী একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তারা স্বাধীনতায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি চায় না। তারা চায় বাংলাদেশ যাতে পাকিস্তান থেকে আরও পিছিয়ে যায় এবং প্রমাণ করতে চায় আমরা পাকিস্তানে ভালো ছিলাম। ’

‘তারা শুধু দেশে নয়—দেশের বাইরে থেকেও এই অপতৎপরতায় লিপ্ত। যেহেতু এরা রাজপথে স্বাধীনতার শক্তির সঙ্গে পেরে উঠছে না, জনগণ তাদের গ্রহণ করছে না তাই এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত। ’

আব্দুস সবুর বলেন, ‘আমাদের কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের যে সব পরামর্শ এসেছে, সেগুলোর আলোকে সরকারের আইসিটি খাতের করণীয় বিষয়ে দলের উপকমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ পাঠানো হয়। আমরা গ্রাম-শহরে ইন্টারনেটের সমান সুবিধার কথা বলেছি। ইন্টারনেট সারাদেশে মানুষের জীবনযাত্রা  পরিবর্তন করে দিয়েছে। ’

‘এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকা আছে। তাদের জন্যই লার্নিং এবং আর্নিংয়ের মাধ্যমে তরুণ সমাজ উপার্জন করতে পারছে। এটা একটা বিরাট অর্জন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতিবছর জুলাই মাসে বজ্রপাত হতে দেখা যায়। আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নিয়ে সেমিনারের মাধ্যমে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। আমাদের সড়ক নেটওয়ার্ক সব উত্তর-দক্ষিণমুখী। পূর্ব-পশ্চিমমুখী তেমন সড়ক নেই। চট্টগ্রাম থেকে খুলনা যেতে ১৭-১৮ ঘটনা সময় লাগে। আমরা এ বিষয়ে সেমিনার করেছি। সেখানে বলেছি, চার ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে খুলনা যাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রয়োজন। ’

‘এই রুটে অনেকগুলো ব্রিজ হবে, একটা টানেল হবে। খুলনা থেকে মোংলা হয়ে পটুয়াখালী, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। সেখানে নতুন নতুন আধুনিক শহর সৃষ্টি হবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিকশিত হবে, পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে এবং অর্থনীতি কর্মচাঞ্চলতা সৃষ্টি হবে, ব্লু  ইকোনোমি ডেভেলপ করবে। পুরো দক্ষিণ অঞ্চল এবং চারটি সমুদ্র বন্দরকে এটা যুক্ত করবে। এতে দেশের জিডিপি শতকরা দুই থেকে তিন ভাগ বাড়বে। ’

‘এছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি বিষয়ক পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সেমিনার করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কিভাবে কাজে লাগবে সে বিষয়গুলো আমরা দেখিয়েছি। ’

কর্মশালার ছবি

সরকারের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি আমরা দলগতভাবে নেতাকর্মীদের, জনগণকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি। এক্ষেত্রে আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্যপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের পরামর্শ, সহযোগিতা দিচ্ছেন। ’

এ বিষয়ে যুব সমাজের দিক থেকে কতটুকু সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের সঙ্গে এখন আমাদের দেশের চিন্তা-চেতনায় পার্থক্য নেই। বর্তমান প্রজন্ম জ্ঞানের দিক থেকে, চিন্তা-চেতনার দিক থেকে যথেষ্ট এগিয়ে আছে। কর্মমুখী চিন্তা ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে। এই জায়গাটি আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
এসকে/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।