ঢাকা: সরকার জনগণের ওপর যে অত্যাচার, গুম-খুন করছে সেটাকে হালাল করার জন্য জনগণের টাকা দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২৬ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটাকে দূর করার জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। তাদের মাসে ২০ হাজার ডলার দিতে হবে। এতদিন তো লম্বা লেকচার মারলেন, অনেক কথা বললেন, এখন কেন এই লবিস্ট নিয়োগ করছেন? কারণ একটাই—জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জনগণের ওপরে অত্যাচার-গুম-খুনকে হালাল করতে চাচ্ছেন, ঢাকতে চাচ্ছেন, আড়াল করতে চাচ্ছেন। কিন্তু কথায় বলে না, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এখন ধর্মের কল বাতাসে নড়তে শুরু করেছে। চতুর্দিকে ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আর উপায় নাই!
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, এখন নাকি গণ-পেনশন দেবে। পরিষ্কার করে কিছু বলছে না, আমরা যেটুকু বুঝতে পারছি। আর একটা লুটের কায়দা তারা করতে যাচ্ছে। মানুষের কাছ থেকে প্রতিমাসে এক হাজার করে টাকা নেবে, ৬০ বছর পরে দেবে। এর মধ্যে মারা গেলে ফেরত পাবে না। যদিও এখনও পাস হয়নি। তবে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন কী করে লুট করা যায়, কী করে মানুষের পকেট কাটা যায় সেই ব্যবস্থাই তারা করছে। মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান তারা করতে পারছে না। পারছে না তো বটেই, বরং মানুষকে তারা বিপদে ফেলছে। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের একটাই সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে—আওয়ামী লীগ। মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করতে শুরু করেছে। আজকাল মানুষ গালিও দেয়—এই তুই মানুষ না, আওয়ামী লীগ? এটা গ্রামেগঞ্জে সব জায়গায় হয়ে গেছে। আমরা টের পাই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের জান বাঁচে না। আমরা কোনো রকমে রক্ষা পেতে চাই। আর তারা টিকা নিয়ে প্রথম থেকেই শুরু করেছে দুর্নীতি। তাও একই ব্যক্তি, যিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন, তাকে দিয়েই টিকা আমদানি করা হয়েছে। সেখানেও কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে লুটপাট হচ্ছে না। ছোট বেলায় আমাদের মায়েরা কবিতা বলে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতো—‘ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে’, বর্গিরা লুট করে নিয়ে যেত, আজকে সেভাবেই এই সরকার লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। কথাটা আজকের নয়। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৪ সালে এই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামটা বদলে দিয়ে নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি করা উচিত। আজকে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটা লুটপাটের দলে পরিণত হয়েছে। লুটপাট করে, সম্পদ লুট করে, বিদেশে পাচার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
তিনি বলেন, আমরা পথে নেমেছি, রাস্তায় নেমেছি। জনগণের কাছে আবেদন জানাতে চাই—আসুন আপনারা শরিক হোন। তরুণ যুবকদের আহ্বান জানাই, জেগে উঠুন দেশকে রক্ষা করার জন্য। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য সবাই একযোগে নেমে পড়ি।
সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি দিন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার গঠন করুন। তবেই সংকটের সমাধান হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, জাসাস আহবায়ক হেলাল খান, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
এমএইচ/এমজেএফ