ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই, সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং ১৯৯১ সালের মতো সরকার গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ’
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোলমডেল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের কথা মুখে বলে কিন্তু কাজে বিশ্বাস করে না। যারা পরিকল্পিতভাবে এবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। সংগ্রাম এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। তাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের মতো তাদেরকে ক্ষমতা দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটা সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র এ সংকট থেকে উত্তোরণ সম্ভব হবে। জাতির ভবিষ্যত নির্মাণ করা হবে। যেভাবে এ দেশকে একটা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছে, যেভাবে সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, পুনরায় সেগুলোকে নির্মাণ করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের আলোচনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে তা থেকে উত্তোরণের সম্ভবত একমাত্র দিক-নির্দেশনা। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষোভের কারণ হচ্ছে ১৯৭১ সালে আমরা যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করবো। সেই সবকিছুকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন ব্যবস্থা। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। জনগণ তাদের পছন্দমতো, দল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। যেখানে রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। ’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৯১ সালে যে ক্রাইসি ছিল, একটা স্বৈরাচারের হাত থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারই নির্দেশনায় সেদিন যে ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেটা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছিল যে বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংস্কৃতিক, যে কালচার সেই কালচারে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সেই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। ’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দিক-নির্দেশনায় তখনকার সংবিধানে সেই ব্যবস্থা না থাকার পরেও জনগণের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে, বাস্তবতার প্রয়োজনে সেদিন সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, সব রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে। তখন প্রমাণিত হয়েছে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার তৈরি করেছিলেন। সেটা ছিল দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সরকার। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই ১৯৯১ সাল আর আজকে ২০২২ প্রায় ৩১ বছর পরে, গত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে না। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক কোন সরকার গঠিত হবে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ নির্মিত হবে না। ’
দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আসুন আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নয়, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবার জন্য, আমার সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা দুর্বার সংগ্রাম গড়ে তুলি, যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্রী, কতৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার জনগণের সংসদ গঠন করতে পারবো। ’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ আযম খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
এমএইচ/এএটি