নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, আমার সন্তানদের যদি আমি মিথ্যা বলি আমি যেমন ছোট হয়ে যাবো একজন বাবা হিসেবে। তেমনি আপনাদের মিথ্যা কথা বললে আমি নিজেকে মাফ করতে পারব না।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, নবীন বরণ একটা আনন্দের দিন। আমি এদিনে আপনাদের মিথ্যা আশ্বাস দিতে চাই না। সাতাশ হাজার ছাত্র পড়ে এ কলেজে। এটুকু একটা জায়গা, এটা কি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাঠ হওয়ার যোগ্য। আমাদের চাহিদার শেষ নেই কিন্তু দিতে পারছি না কিছু। পঞ্চাশ শতাংশ ছাত্রেরও বসার জায়গা নেই এখানে। জীবনের এ সময়ে এসে এটা অস্বীকার করলে মিথ্যা বলা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা কেউ দুনিয়ায় পারফেক্ট নই। এটা আমাদের বাংলাদেশ। এ দেশকে যদি কেউ হেয় করার চেষ্টা করে এবং কেউ তাতে খুশি হয় আমি লজ্জিত হই। আমরা গোলামি থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু গোলামির চরিত্র থেকে মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের করার মতো কিছু নেই এখন। যখন বাসায় থাকি মনে হয় অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমি আপনাদের মতো পারবো না, আপনাদের করতে হবে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে তোলারাম কলেজ সরকারি করার দাবিতে জিয়াউর রহমানকে আটকে পিঠ ক্ষতবিক্ষত করেছি, আমার স্বার্থ কি। আমরা যখন গোলাম আজমকে অবাঞ্ছিত করেছিলাম, আমাদের ২০ জন ছেলেকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল। এ কলেজে ৮১ সনে প্রতিবাদ করেছিলাম রাজাকার রাষ্ট্র প্রধানকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা ঢুকতে দেইনি। প্রশাসন আমাদের ওপর গুলি করল। আমাকে বারান্দার সামনে দাঁড় করিয়ে ছয়টা রাইফেল দিয়ে একাধারে গুলি করা হলো। আল্লাহর রহমতে গুলি লাগেনি৷ কিন্তু ওই ক্লাসে আমার ভাই আবু আউয়ালকে পরীক্ষারত অবস্থায় মারা হয়েছে, ৮৫ জন ছেলেকে আমার গুলি করে মারা হয়েছিল। আমাদের কি স্বার্থ ছিল। আমাদের স্বার্থ একটাই, আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যত। আমরা যৌবন কৈশর দেখিনি কারণ জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা বলি না আপনারা ছাত্রলীগ করেন, দেশটাকে তো ভালোবাসবেন। আমি নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ দেখি না, তারুণ্য দেখি না। যখন গরিবের পেটে লাথি মারা হয় শ্রমিকের পেটে লাথি মারা হয়, কোথায় থাকে ছাত্র সমাজ। আমি বড় হয়েছি, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার, এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার। আমি এই কবিতা পড়ে অভ্যস্ত।
তিনি বলেন, আমি সাহস দেখে অবাক হই, এরশাদ সাহেবের স্ত্রী রওশন এরশাদ তোলারাম কলেজের জায়গা দখল করতে আসলেন, সেনাবাহিনী পুলিশ আসল৷ এক ইঞ্চি জায়গা দখল করতে পারেনি। আজকে আমরা দেখি সিটি করপোরেশন এসে তেলারাম কলেজের জায়গা দখল করে পানির মোটর লাগাতে চায়। কি করবো বলেন, পানির মোটর লাগাতে দেব, না বিল্ডিং করবো। আস্তে আস্তে ফিস ফিস করে কথা বললে কাজ হবে না। ছাত্র সমাজ ফিস ফিস করে কথা বললে জীবনেও সামনে এগুতে পারবেন না৷ আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, আপনি যে ছাত্র।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পটপরিবর্তন করেছে ছাত্রসমাজ। আপনারা কেমন যেন মিনমিনে হয়ে যাচ্ছেন। আপনি ফেসবুকে চ্যাটিং করেন সমস্যা নেই। তবে ডু সামথিং ফর ইউর কান্ট্রি। শামীম ওসমান অন্যায় করলে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের কথা বলব না, সব ছাত্রদের এক প্ল্যাটফর্মে আসতে বলব।
এমপি শামীম ওসমান বলেন, নটাঙ্কি দেখতে দেখতে আর ভালো লাগে না৷ রাজনীতি ব্যবসা হয়ে গেছে। শতকোটি টাকার বাড়ি বানাই ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে ১০ টাকাও নেই। এনবিআর কি করে জানি না, দুদক নামের কোনো বস্তু আছে তাও চিনি না। ভালো ভালো সব লোক বসা সেখানে। দেশের সবচেয়ে দামী দামী লোক বসা সেখানে। তদন্ত তো দেখি না। মুখ খুলতে চাই না, সময় হলে মুখ খুলবো।
এ পরিসরে নবীন বরণ হয় না। আমি রিয়াদসহ সবাইকে অনুরোধ করবো, দ্রুত আলোচনা করুন। একেএম শামসুজ্জোহার স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জের সব কলেজের নবীন বরণের আয়োজন করেন। যা কিছু লাগে আমি করবো। সেদিন নারায়ণগঞ্জকে জানান দিবেন বাংলাদেশকে জানান দিবেন আমরা ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো।
শামীম ওসমান বলেন, আপনাদের কাছে বিচার দিচ্ছি, তিন বছর ধরে চেষ্টা করে নারায়ণগঞ্জের সব বড় বড় প্রকল্প এনেছি। প্রায় আটশ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল আইটি ইনস্টিটিউট হবে। আমার স্বপ্ন ছিল দুটো প্রজেক্টের। আমার মা শেখ হাসিনার কাছে আমি নারায়ণগঞ্জের চাহিদাগুলো বললাম। তিনি বললেন, আর কিছু চাও না, আমি বললাম না। আমি বললাম এ কাজগুলো করতে চাই যেন মানুষ আমাকে মনে রাখে। আমি যা যা চেয়েছি তা তা উনি দিয়েছেন। ডিও লেটার দিলাম আমি, কথা বললাম আমি, ভিক্ষা চাইলাম আমি। তবে কিছু কুচক্রী মহল এটাকে এমন জায়গায় দূরে নিতে চায় এ এলাকার মানুষের যাওয়া সম্ভব নয়। আমি বলেছিলাম এ প্রতিষ্ঠান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে হবে৷ এখন এটাকে এখান থেকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ চেষ্টা হলে আমি রাস্তায় নামব। যেখানে চেয়েছি সেখানে এটা হতে হবে। যারা সরাতে চাচ্ছেন শুনেন, তোলারাম কলেজের ছাত্রছাত্রীরা একাই নারায়ণগঞ্জের নক্ষত্র বদলিয়ে দিতে পারে।
আমি সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় চলেন। তোলারাম কলেজের মাটিতে হাত দিবেন না। নারায়ণগঞ্জ কেন দেশের কোথাও যদি কোনো ছাত্রের গায়ে হাত উঠালে নারায়ণগঞ্জের ছাত্ররা চাড়া কাপিয়ে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে কিছু মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। যারা কথা বলেন, হিসেব করে কথা বলবেন৷ কারণ আমি যদি মুখ খুলি তাহলে লজ্জায় মুখ ঢাকতে পারবেন না৷
এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপিসহ কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষক শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২২
এমআরপি/আরআইএস