ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের মানুষ সীমাহীন অর্থনৈতিক কষ্টে আছেন।
শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাপা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এখন অনেকেই প্যান্ট-শার্ট পড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। টিসিবির পণ্য কিনতে এক কিলোমিটার লাইন, দিনের শেষে অনেকেই খালি হাতে বাসায় ফেরেন। সরকার সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝে না, হতদরিদ্রের ভাষা বোঝে না মন্ত্রীরা। এভাবে চলতে থাকলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। টিসিবির পণ্য দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এমন বাস্তবতায় সরকার রেশনিং চালু করতে পারে।
তিনি বলেন, যারা সরকারি দল করেন, শুধু তারাই অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছেন। তারা লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি আর দখলের রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন। মানুষ কারো কাছে বিচার চাইতে পারে না। মানুষ জানে না কার কাছে গেলে কোন প্রতিকার মিলবে। কারো হয়তো আয় বেড়েছে লাখ-লাখ টাকা, আর বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। তাই কাগজে কলমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না দেশের সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। তারা উৎসবের নির্বাচনকে আতঙ্কে পরিণত করেছে। নির্বাচনের নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই সাধারণ জনগণ এখন আর ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। দেশের মানুষকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ সুশাসন ভোগ করবে।
এসময় দলীয় মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর নাখোশ আর বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। গণমানুষের অধিকার নিয়ে মাঠে নামলেই দেশের সুশীল সমাজ জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকবে। দেশের মানুষ দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। একটি চক্র সিন্ডিকেট করে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী করেছে। সরকারের যেন কিছুই করার নেই। বিএনপি আর আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানুষ দুটি দলকে আর চায় না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপা কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ভয় করি না। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সৈনিকরা জেল, জুলুম ও অত্যাচার ভয় পায় না। আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পিছপা হব না।
সভাপতির বক্তব্যে দলীয় কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছে, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি মানুষের কষ্টে ঘরে বসে থাকতে পারে না। জাতীয় পার্টি গণমানুষের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এসএম ফয়সাল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি। সম্মেলন পরিচালনা করেন জাপার যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে।
সম্মেলনে আগামী দুই বছরের জন্য জাপা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জন্য পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপিকে পুনরায় সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম রুবেলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এ সময় তাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতেও নির্দেশ দেন তিনি।
সম্মেলনকে ঘিরে পুরো গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং মহানগর নাট্যমঞ্চের আশপাশ এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে ব্যদ্যযন্ত্রসহ মিছিল নিয়ে সম্মেলনে শরিক হন নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৮টার মধ্যে কানায় কানায় ভরে যায় নাট্যমঞ্চের হল।
বাংলাদেশ সময় ১৮৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এসএমএকে/এমএমজেড