ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। তাদের প্রতি কীভাবে আমরা সহানুভূতি প্রকাশ করবো তার ভাষাও আমাদের কাছে নাই।
তিনি বলেন, গুম করে নানা নির্যাতন করা, এমনকি থানায় জিডি পর্যন্ত করতে দেয় নাই—আজকে এই বিষয়গুলো আর গোপন থাকে নাই। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্নায় আমরা ভাষাহীন।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে লেকসোর হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ড. মোশাররফ।
বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ইলিয়াস আলীসহ সকল গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শিরোনামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মোশাররফ বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—আজকে জনগণের কাছে এটা পরিস্কার যে, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে বর্তমানে এই স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এই কান্নার শেষ দেখতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। তা করতে হলে এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক জনগণ, ব্যক্তি, দলকে সরকার হটানোর ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে এ দেশে কারো কান্না থামবে না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে পুঙ্খাপুঙ্খভাবে সত্য ঘটনাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। অনেক মন্ত্রী বলেন, এই রিপোর্টের সাথে বাস্তবতার অনেক তফাত। আমি তাদের সাথে একমত, এই রিপোর্টের সাথে বাস্তবতার তফাত এই কারণে যে, বাস্তবতা হচ্ছে আরও কঠিন, বাস্তবতা হচ্ছে আরও বেশি ঘটনার। এই রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারি সরকার কোনো কিছু ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারিনি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন এতগুলো বছর পরে এটাই হলো সত্য যে, আমরা সিন্দাবাদের দৈত্যের চাইতে নিষ্ঠুর একটা দৈত্যকে কাঁধে নিয়ে চলছি। না নিয়েও উপায় নেই। আমরা যদি অনেক জোরে কাঁধ ঝাঁকি দেই তিনি পড়েন না, আমরা যেরকম করেই চেষ্টা করছি তিনি যাচ্ছেন না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণ-অধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাইদুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মশিউর রহমান লোটাস, পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে আদিবা হোসেন হৃদি, নুরুজ্জামান রনির স্ত্রী মনীষা, মনির হোসেনের ভাই ওবায়দুল্লাহ হোসেন বক্তব্য দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সিনিয়র নেতা শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, জয়নুল আবদিন ফারুক, শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, মীর হেলাল, ফরিদা ইয়াসমীন, আবেদ রাজাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্য ও কানাডা দূতাবাসের কুটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ