ঢাকা: নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পরিবার বর্তমানে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৩০ এপিল) দুপুরে বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইলিয়াস আলীর পরিবার অনেক বিপদে আছেন। তার স্ত্রী লুনার সঙ্গে কথা হচ্ছিল কিছুক্ষণ আগে। লুনা জানিয়েছেন ইলিয়াস আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডেল করতে পারছেন না। তার গাড়ির ট্যাক্স দিতে পারছেন না। এই বিষয়গুলো তার পরিবারের কাছে একটা মর্মান্তিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মেয়ের ভর্তির ব্যাপারে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সব কলেজে মেয়েকে ভর্তি করছিল না। পরিবর্তীকালে অনেক চেষ্টা-তদবির করে মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা শুধু ইলিয়াস আলীর পরিবারের ক্ষেত্রে নয়, গুম হওয়া সব পরিবারগুলোর সদস্যরা এমন নিদারুণ কষ্টের মধ্যে আছেন।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের সন্ধানে সরকারের কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যায় না। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার বিষয়ে কোনো প্রচেষ্টা দেখা যায়নি, যেহেতু সরকারই এখানে জড়িত। যখন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তো মানুষজন দেখেছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। যারা দেখেছেন তারাও গুম হয়েছেন, তার গাড়ির চালকও গুম হয়েছেন। এটা খুব পরিষ্কার যে, এই সরকারের দ্বারাই এটা হয়েছে। সেই কারণে তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় না।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পরে এটা সারা দেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃস্টি করে এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে আগে এটা ছিল না। এই প্রথম দেখলাম যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে দেখেছেন পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে শুধু বিএনপিরই ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এই গুমের কারণে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সাতজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তারা মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রেতো যেতেই পারবেন না বরং তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্য কেউ অর্থনৈতিক সম্পর্কও করতে পারবে না। এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের কথা নয়, গৌরবের বিষয় নয়। বরং লজ্জার বিষয়। এই কথাটি আমরা বারবার বলেছি, গুম বা ননজুডিশিয়াল কিলিং এটা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য করা হয়। এজন্য তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় গুমের আশ্রয় নিয়েছে। গুম করে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিষেধাজ্ঞাটা নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিষেধাজ্ঞাগুলো যখন আরোপ করা হয় একটা দেশের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট পুরোপুরিভাবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপরই আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর যে মানবাধিকার রিপোর্ট দেয় সেখানে এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে এসেছে। সেই সংগে আরও একটা বিষয় এসেছে যে বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিচারবিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার যে মামলা সে সম্পর্কে বলা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো এখন প্রমাণিত সত্য।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে কতটা দে্উলিয়া হয়ে গেছে যে তারা জাতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতকে বলতে চায়। ভারতকে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবে। এই সরকারের মুখ নেই। তারা এটা নিয়ে জনগণের সামনে যেতে পারছে না। অন্যদিকে তারাতো জোর করে আছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই বাহিনীগুলোকে তারা ব্যবহার করছে। এই ব্যাবহার করার কারণে তাদেরকে তারা কীভাবে শাস্তি দেবে? তাদেরকে কীভাবে বের করে দেবে, কীভাবে আইনের আওতায় আনবে- সেটা তারা পারছে না। যেটা আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বলেছেন যতক্ষণ না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা উঠবে না।
এসময় তার সাথে ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস উংইয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড