ঢাকা: আগামী জুন মাস থেকে আবারও এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য পণ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু দরিদ্রসীমার নিচে মানুষদের সাশ্রয়ের চিন্তা করছি।
সোমবার (০৯ মে) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এসময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অতিরিক্ত সচিব এএসএম শফিকুজ্জাম, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত ছিলেন।
জুন মাস থেকে এক কোটি পরিবারকে আবার সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এক কোটি পরিবারকে এখন যে ভাবে সহায়তা দিচ্ছি সেভাবে দিয়ে যাব। আমাদের দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ২০ লাখ দারিদ্রসীমার নিচে। সেখানে আমরা এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয় মূল্যে খাদ্য পণ্য দেব। এক কোটি পরিবার মানে ৫ কোটি লোক। আমরা কিন্তু দরিদ্রসীমার নিচে মানুষদের সাশ্রয়ের চিন্তা করছি।
তিনি বলেন, আমি ৫০ লাখ পরিবারের কথা বলে ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যত কষ্ট হোক, এক কোটি মানুষকে দুই বার দেওয়া হয়েছে। আবার দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন রমজান মাসের পরে। একই সঙ্গে বলেছেন এটা বন্ধ করা যাবে না। যতদিন প্রয়োজন হবে এবং দেশে এরকম দাম থাকবে এই এককোটি পরিবারের ৫ কোটি মানুষকে তোমাদের এভাবে সাহায্য করতে হবে। আমাদের তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার দাম আমরা কমাতে পারব না। দেশের বাজারে দাম কম রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, সেটার গ্যারান্টি দিতে পারি।
টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ন্যায্য দামে পণ্য দেবেন, সেখানে কী তেলের দাম সমন্বয় করবেন, নাকি আগের দামেই বিক্রি করা হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে অনেক ঘাটতি হচ্ছে, অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যদি আপনারা বলেন ১০ টাকা বাড়ানো উচিৎ বা এটা ন্যায্য হয়েছে তাহলে আমরা বাড়িয়ে দেব। সব কিছু মিলে আমরা এখনও ফাইনাল করিনি।
তিনি বলেন, বাজারে যখন ২০০ টাকা তেল হয়ে যায় তখন অনেক পার্থক্য থাকে। তখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে একই লোক ঘুরে ফিরে আসে। লাইন ধরে যারা কেনে তারা দুই তিনবার করে কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নেইনি।
আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত তেলের দামও বেড়ে গেছে সেখানে আপনারা কী করছেন জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, সেটাতো নামমাত্র উৎপাদন হয়। যখন দাম বাড়ে তখন তারাও একটু সুযোগ নেয়। সবাইতো ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির না। আমরা সব দিক থেকেই চেষ্টা করছি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি যে কোথায় কোথায় আমাদের সমস্যা হয়েছে। কোথায় কোথায় বেশি লাভের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। গত এক দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। আজকে বাজারে যে তেল ছেড়েছে সেটা দুই মাস আগে বন্দর ছেড়েছে।
তিনি বলেন, তেলের দাম বেড়েছে, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু আরও একটা সত্য আছে, সেটা হলো আমরা আমাদের দেশে তেল উৎপাদন করি না। মোট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ তেল আমাদের সার্বিকভাবে হয়। আর বাকি ৯০ ভাগ তেল আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
টিপু মুনশি বলেন, এখন যে তেল কিনছি ১৯৮ টাকায় সে তেল এলসি করা হয়েছিল অন্তত ৪৫ দিন আগে। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কত ছিল— জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কে কত দামে খুলেছে (এলসি) সেটার চেয়ে বড় কথা যে মাসটা ঠিক করি আমরা, সে মাসে তারা কত দামে ক্লিয়ার করল। সবগুলো এলসি কত দামে তারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ক্লিয়ার করল, সেটা ধরে করেছি। এটা যে আজকে ২৫০ টাকা হচ্ছে, সেটা ধরে হচ্ছে না। কত আগে খুলেছে সেটা মূল বিষয় নয়। কী দামে চট্টগ্রাম বন্দরে সব ক্লিয়ার হলো, সেটার গড় করে নির্ধারণ করা হয়। গতকাল (রোববার) দাম ছিল ১ হাজার ৯৫০ ডলার (প্রতি টন)। আমাদের নির্ধারণ করার সময় ছিল ১ হাজার ৭৫০ ডলার। তাই ৪০ বা ৪৫ দিন ফ্যাক্টর না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই মেসেজ, আন্তর্জাতিক বাজার ও আশে পাশের দেশগুলো বাজারসহ পারিপার্শ্বিক কিছু বিবেচনা করে যতটুকু কম রাখা যায় আমরা সেই চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, মে ০৯,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড