নোয়াখালী: কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে যিনি বিএনপি চালাবেন, আগামীদিনের প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি লন্ডনে বসে ভোগবিলাসে মত্ত। রিমোট কন্ট্রোলে দল চালাচ্ছেন।
রোববার (১৫ মে) দুপুরে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বারে ও বিএডিসি খামারে সয়াবিন, ভুট্টা ও সূর্যমুখীর মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় আসার জন্য হুমকি দিতে পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমরা দেখেছি, বিএনপি ২০০৯ সাল থেকে শুরু করেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য হরতাল অবরোধ দিয়েছিল। নির্বাচনের দিনও তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। মানুষকে বাসের মধ্যে রেখে আগুন লাগিয়ে দগ্ধ করে মেরেছে।
ক্ষমতায় যেতে হলে মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। সুবর্ণচর আসতে হবে। মানুষের দুঃখ কষ্টের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাছাড়া ক্ষমতায় আসা যাবে না, যোগ করেন মন্ত্রী।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ করব। গত ৮ মে আওয়ামী লীগের নির্বাহী সংসদের সভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। জনগণের কাছে যেতে বলা হয়েছে।
চাষিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীর পতিত জমিগুলোকে আবাদের আওতায় আনতে আউশ ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। আপনারা স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন অধিক ফলনশীল এ জাতগুলো রবি ফসল কাটার পরপরই আবাদ করবেন। চাষাবাদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সহযোগিতা দিতে বিএডিসি বীজ, সার ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। জাতগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করতে হলে চরাঞ্চল, উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি প্রতিকূল এলাকার জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না। পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। পতিত জমিতে যারা চাষ করবেন, তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এছাড়াও বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষিদের সয়াবিনের মাঠ পরিদর্শনকালে মন্ত্রী চরাঞ্চলে অবস্থিত পতিত জমিতে তেল জাতীয় ফসল সয়াবিন, সূর্যমুখী ও সরিষার আবাদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, তেল জাতীয় ফসল আবাদে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি। এ বিষয়ে এ কৃষিবান্ধব সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, লবণাক্ততা উপকূলীয় এলাকার একটি অন্যতম সমস্যা। লবণাক্ত জমিতে চাষের উপযোগী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। লবণাক্ত এলাকায় লাউ, শিম, তরমুজ, সূর্যমুখী, মিষ্টি আলু ও সয়াবিনের ফলন ভালো হয়। এ ফসলগুলো ক্রপিং প্যাটার্নে অন্তর্ভুক্ত করে চর এলাকার প্রত্যেকটি জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে। বর্তমান সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, আধুনিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাছাড়া লবণাক্ত জমিতে যেসব ফল ও শাক-সবজির আবাদ হয়, সেগুলো খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। চর এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি বিস্তারের জন্য এবং অবহেলিত দুর্গম এলাকার জনগণকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে সুবর্ণচরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বর্ধন খামার, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপকেন্দ্র, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয়, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
এসময় কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বিএডিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আমজাত হোসেন, নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ, জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম, বিএডিসির সুবর্ণচর প্রকল্পের পরিচালক আজিম উদ্দিনসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
এসআই