ঢাকা: গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর অসন্তুষ্ট হলেও ঢালাও অভিযোগ বা সমালোচনা করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এই নির্বাচন কেন বন্ধ করা হলো তার সুনির্দিষ্ট কারণ ও ব্যাখ্যা চায় দলটি।
গত ১২ অক্টোবর জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। সেদিন ওই আসনে ভোট গ্রহণ সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না মনে করে ইসি উপ-নির্বাচনটি বন্ধ ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ায় আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীই বিজয়ী হওয়ার অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের নেওয়া উদ্যোগে আইন তৈরি এবং সেই আইনের ভিত্তিতে বর্তমান ইসি নিয়োগ দেওয়া হয়। শুরু থেকেই বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল এই ইসির ঢালাও বিরোধিতা করে আসছে।
তারা বলেন, ইসি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ ইসির বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ তুললে বা সমালোচনা করলে বিরোধীরা আরও সুযোগ খুঁজবে। তাই ইসির এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিক্রিয়া দেখানো বা সমালোচনার ক্ষেত্রে সতর্ক হয়েই কথা বলবে। তবে আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন বাতিলের কারণ ও ব্যাখা চায়৷
দলটির পক্ষ থেকেও কারণ অনুসদ্ধান করা হবে বলে ওই নেতারা জানান৷ পরবর্তীতে এ ব্যাপারে ইসি যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন৷
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া এই আসনের এমপি ছিলেন। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায়র পর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মাহামুদ হাসান রিপন নৌকা প্রতীক, জাতীয় পার্টি থেকে এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু লাঙ্গল প্রতীক, বিকল্পধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম কুলা প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ আপেল প্রতীক ও মাহবুবুর রহমান ট্রাক প্রতীকসহ মোট পাঁচ প্রার্থী অংশ নেন।
গাইবান্ধার এই উপ-নির্বাচন বাতিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে ইসির ওপর কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঢাকায় বসে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে নির্বাচন বন্ধ করা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। এ নির্বাচন বন্ধ করার প্রক্রিয়াটা যৌক্তিক হয়নি বলে তারা মনে করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ঢাকায় বসে ছবি ও ভিডিও দেখে তারা (ইসি) কীভাবে সিদ্ধান্ত নিল। এই নির্বাচন বন্ধ করা কতটা যৌক্তিক, কতটা বাস্তবসম্মত?
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবারই সংবাদ সম্মেলনে ইসির অবস্থান তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ইসি যদি অনুমিত হয় নির্বাচনটা সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না তাহলে যে কোনো কেন্দ্রের বা সব কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। সেটা ঢাকায় বসে হোক বা সেখানে বসে হোক৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইসির সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা কোনো বিতর্ক করতে চাই না। তারা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ক্ষমতা আছে। কিন্তু এই নির্বাচন বন্ধের যৌক্তিক কারণ কী তার ব্যাখ্যা থাকা দরকার। এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমরা চাই। নির্বাচন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে কী কারণ রয়েছে দল থেকে আমরাও তা খতিয়ে দেখব।
আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছি। ইসি স্বাধীন, তাদের এখতিয়ার আছে নির্বাচন বন্ধ করার। যে প্রক্রিয়াতে গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন বাতিল করেছে সেটা যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে ইসি যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
এসকে/এমএমজেড