ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘তদারকি’ সরকারের রূপরেখা প্রণয়নে আলোচনা শুরুর দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
‘তদারকি’ সরকারের রূপরেখা প্রণয়নে আলোচনা শুরুর দাবি

ঢাকা: নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা প্রণয়নের জন্য সরকারকে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট। শনিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম জোটের মতবিনিময় সভা থেকে এ আহবান জানানো হয়।

জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সুমাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. এস এম এ সবুর, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোশতাক হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ৫১ বছরে এদেশে বহুবার সরকার বদল হলেও দেশে এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রতিনিধিত্বশীল ও অর্থবহ নির্বাচনের স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনের নামে প্রহসন সংগঠিত করেছেন। মানুষের ভোট দেওয়ার ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অনিশ্চয়তা, অচলব্যবস্থা ও নৈরাজ্য। এমতাবস্থায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) দিয়েও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন বর্তমান জাতীয় সংসদ বহাল রেখে সব দল ও জনগণের জন্য নির্বাচনের সমান সুযোগও তৈরি হবে না। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সব দল ও সমাজের অপরাপর অংশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নতুন করে ইসি পুনর্গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অপরির্হায হয়ে পড়েছে। যা আজ গণ দাবিতে পরিণত হয়েছে।

এই বাম নেতা বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের সমান সুযোগ এবং অবাধ-ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের নিশ্চয়তা বিধান হলো একটি অবাধ-নিরপেক্ষ-অংশগ্রহণমূলক-অর্থবহ নির্বাচনের প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণকে এই ন্যূনতম সুযোগটি থেকেও বারবার বঞ্চিত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন বুর্জোয়া শাসকরা তাদের দলীয় স্বার্থে নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নির্বাচনকে আজ বহুলাংশে এক কুৎসিত ‘টাকার খেলা’, ‘পেশিশক্তির প্রতিযোগিতা’, ‘প্রশাসনিক কারসাজি’ ও ‘সাম্প্রদায়িকতার বিভাজন সৃষ্টির’ ওস্তাদিতে পরিণত করা হয়েছে। জনমত নয়, দেশি-বিদেশি শাসক শোষকগোষ্ঠীর ইচ্ছা এবং ‘অর্থ-অস্ত্র-ম্যানিপুলেশন নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষেত্রে নিয়ামক করে ফেলা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাচন ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের জন্য নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট, জনসভাসহ প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া, স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, নিজে অথবা পরিবারের কেউ ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী, ঋণখেলাপী কিংবা ঋণখেলাপির জামিনদার হলে, কালো টাকার মালিক, অর্থ পাচারকারী বলে বিবেচিত হলে, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে, সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ অথবা চাকরিচ্যুতির ৫ বছর অতিক্রম না করলে, কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার বিধান করা। রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে-প্রার্থী হতে হলে, তাকে কমপক্ষে ৩ বছর দলের সদস্যপদ নিয়ে এবং জনগণকে অবহিত রেখে দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া, প্রতিনিধি প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ‘না’ ভোট প্রবর্তন, ডিসি, ইউএনওদের নয়, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া। নির্দলীয় প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ ও স্থানীয়দের অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়ার প্রন্তাব করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, ইভিএম বিতর্কিত এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই মেশিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে। এছাড়া ইভিএমে ভোট কারচুপির সুযোগ থেকেই যায়। সারা বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও দেশের মানুষের বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা মনে করি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সবার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হওয়া কথা। অথচ দেশে আজও গণতন্ত্র নেই। জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত ইসি সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারচুপি করার জন্য ইভিএম একটি সহায়ক পদ্ধতি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আপনি যদি ফলাফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন, তার বিপরীতে পরীক্ষা করার জন্য কোনো ব্যবস্থা এ পদ্ধতিতে থাকে না। যার কারণে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারা ফলাফল প্রভাবিত করা খুবই সহজ হয়ে যায়।

বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, আমরা বাম জোট দীর্ঘদিন ধরে এ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। এই দাবিতে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি আদায় করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।