ঢাকা: যুদ্ধাপরাধের কারণে ফাঁসিতে ঝোলা বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী রাতের বেলা রাতে কূটনীতিকদের সঙ্গে পার্টি করেন। সকালে চলে তার ধর্ম ব্যবসা।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শেখ রাসেলের জন্মদিন গাহি তারুণ্যের জয়গান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নওফেল বলেন, যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর পারিবারিক ব্যবসা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসা। রাতের বেলা যায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে পার্টি করার জন্য। মদ পান করে; সবই করে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে। তারা এখন সংঘটিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের সঙ্গে মিলে। আমাদের নিজেদের একটা দোষ আছে, আমরাই এদের রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করাই।
বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, এই উপনিবেশিক শক্তিকে যে পাপ গত ২০০ বছরের শাসনে করে গেছে, আপনারা সেই পাপের ভাগীদার হওয়ার কারণে আবার সেখানে গিয়েছেন। এটা না করে আপনারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা তো একই ভাষাভাষী মানুষ। আমাদের সঙ্গে রাতে পার্টি করা লাগবে না, দিনে চা খেতে খেতে আলোচনা করা যাবে। এই আহ্বান করছি।
তিনি বলেন, আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করব। আর কেউ যদি আসতে না চায়, অবশ্যই তাদের সম্মানের সঙ্গে নির্বাচন না করতে বলবো। কূটনৈতিক পাড়ায় পার্টি না করে আমাদের সঙ্গে বসে চা খেতে-খেতে আলোচনা করেন; তাতে অনেক সওয়াব হবে। আপনারা যদি সংবিধান পরিবর্তন করতে চান, তাহলে নির্বাচনে এসে ভোটের মাধ্যমে সংসদে গিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করুন। অন্যথায় সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার একটি দেশিয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ৭০’র নির্বাচনে পঁচিশ শতাংশ ভোট পাকিস্তানপন্থীদের পক্ষে পড়েছে। এদের বংশধরেরা, এদের আদর্শিক চেতনাধারীরা পঁচাত্তরের পরে জিয়াউর রহমানের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরা পরম্পরা বীজ ও গাছে পরিণত হয়েছে।
এই আগাছাগুলোকে আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। এরা পবিত্র ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে। ইসলামকে ব্যবহার করে সকাল বেলা নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর বলে। রাজনৈতিক মঞ্চে কেউ যদি নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর বলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায়, এই ব্যক্তিই দেখবেন সেই ব্যক্তি যে নামাজের আশেপাশে নাই।
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, আমার মতো অনেকেরই রাজনীতির প্রথম হাতেখড়ি হয় শেখ রাসেলের নামে। শেখ রাসেল নামটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। কর্মী বাহিনী ঐতিহাসিক দ্রোহের চেতনা থেকে উজ্জীবিত করেছে। রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাসেল হত্যার বিচারের দাবি থেকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির উত্থান।
তিনি আরও বলেন, একজন শিশু যে ১০ বছরের; সে তো কোনো রাজনৈতিক সমীকরণের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে জায়গা থেকেই কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগের সৃষ্টি হয়েছে। আমারও রাজনৈতিক অরিয়েন্টেশন হয়েছে ‘আমরা রাসেল নামে’ একটা সংগঠনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতন হতো না যদি সে সময়ে শেখ রাসেলের স্মৃতি নিয়ে তরুণ ও যুব সমাজ পুনরায় উজ্জীবিত না হতো। আমাদের বিপরীত শক্তিও শেখ রাসেল হত্যার বিচারের দাবিতে মাঠে নেমেছিল।
নওফেল আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সে ছিল না। তাহলে কেন তাকে হত্যা করা হলো? এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল তার হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করতে? এই জিনিসটা শিশুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করত হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আজকে শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে ৫৯ বছর বয়স হতো। ৭৫ এর পনের আগস্ট খুনি জিয়ার মদদপুষ্টরা তাকে হত্যা করে। এ হত্যার মাধ্যমে তারা বুঝিয়েছে, তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ভয় পেত। সে জন্য তাকেও বেঁচে থাকতে দেয়নি। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার মূল পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়া, আর তার কুপুত্র তারেক রহমান। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, শেখ রাসেলের আদর্শ ততদিন থাকবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক সাদেকা হালিম, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক এমপি, অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া, মাওলানা এহসান উদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর, ২০২২
এমকে/এমজে