ঢাকা: আন্দোলন-সমাবেশ করা রাজনৈতিক অধিকার। তবে এ অধিকারের নামে বিএনপি যদি ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা করে তাহলে কোনো ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না বলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সদস্যরা মত দিয়েছেন।
শনিবাব (১৯ নভম্বর) আওযামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে উপদেষ্টাদের মতামতের পর প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। সভায় উপস্থিতি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বিএনপিকে সংবিধান মেনে চলতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আন্দোলন করা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে এ অধিকারের নামে যদি বিগত ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে, মানুষ হত্যা করে তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে নাশকতা, সহিংসতা, বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তা মোকাবিলা করবে।
সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়ে এ বিষয়ে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলেছেন। বাইরে থেকে হঠাৎ করে দলে এসেই নেতা হয়ে যায় এবং দলের মনোনয়ন এমনও দেখা যায়। এতে পুরনো নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ থাকে এবং দল ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে উপদেষ্টারা মত দিয়েছেন।
সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বর্তমানে দেশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। এটা অনেকে মানতে পারছে না। সে কারণে চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল খালেক বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে। ভালো প্রার্থী মনোনয়ন দিলে দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। আর দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত জয় পাবে। অনেক সময় দেখা যায় দলে এসেই মনোনয়ন পায়, সামনের সারির নেতা হয়ে যায়। এতে পুরনোরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন, তাকেই খুন করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। প্রধানমন্ত্রী দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ। নানা অপপ্রচার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও এ ধরনের অপপ্রচার দেখা গেছে। এখনও সে ধরনের অপপ্রচার দেখছি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, বিদেশিরা যখন যে বিষয়ে প্রশ্ন তোলে তখন সে সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ইস্যু হলে ব্যবসায়ীরা এর জবাব দেবেন। আমরা অনেক সময় যখন বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলি তখন তারা যৌক্তিক বিষয়ও মানতে চান না। সরকারের উন্নয়ন ও সফলতা তারা স্বীকার করতে চান না।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। সংবিধানের বাইরে কোনো দাবিও আমরা মেনে নেব না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে শতভাগ সহযোগিতা করবে। নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলের নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন মানুষের মধ্যে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
এসকে/আরবি