ঢাকা: রাজধানী ঢাকা শহরের ভেতরে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
রাজধানীতে সমাবেশ করতে দেওয়া হলে দলটি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ নিতে পারে বলে মনে করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সরকার দলীয় নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যেও সরকারের এই অবস্থানের বিষয়টি উঠে আসছে। এ বিষয়ে অতীতের হেফাজতে ইসলামের অবস্থানের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
উল্লেখ্য, বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় এই সমাবেশ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুমতি চেয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতারা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও হুমকি দিয়ে আসছে। এতে জনসাধারণের মধ্যে ইতোমধ্যেই একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র কি হতে পারে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ওই দিন সরকারের পতন ঘটাবে, ওই দিন থেকে খালেদা জিয়ার কথা দেশ চলবে এরকম হুমকি ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নিজেদের দলের কর্মীদের উত্তেজিত এবং বেপরোয়া করে তোলার চেষ্টা করছে বিএনপির নেতারা। এতে সমাবেশের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে এই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
আবার বিএনপির নেতারা এখন নমনীয় সুরে কথা বললেও এটা তাদের কৌশলমাত্র বলেও সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
গত ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন ভিন্ন সুর, না জানি কি কৌশল। এখন মুখে বলছে আমাদের সমাবেশ হবে অনুমতি চাই। মুখে হলো রক্ষণাত্মক মনোভাব, আর অন্তরে হচ্ছে আক্রমনাত্মক শোডাউন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের পুরোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন উগ্র সম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গেও দলটির সখ্য আছে। রাজধানীর ভেতরে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ওই গোষ্ঠীগুলোও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। বিএনপিও এদের সঙ্গে নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম অবস্থান নিয়ে নগরজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল। হেফাজতের সঙ্গেও বিএনপির সখ্য আছে।
ওই সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকাবাসীকে হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরকার হটাতে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাই বিএনপিও এই সমাবেশের নামে হেফাজতের মতো অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলা, নাশকতা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়গুলো সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথায় রয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি ও বিএনপির গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। এর উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলেও সূত্রগুলো জানায়।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য থেকেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
তিনি একাধিকবার বলেছেন, বিএনপি ঢাকায় কোনো সমস্যা তৈরি করলে হেফাজতের ইসলামের পরিণতি হবে। হেফাজতের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো তার চেয়ে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সড়ক, থানা, ওয়ার্ড, পাড়া মহল্লায় অবস্থান নেবে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে দলটির নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আগের দিন ৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিকেলে বায়তুল মোকারম মসজিদের দক্ষিণ গেটে এ সমাবেশের আয়োজন করেছেন।
এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বুধবার এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা জানানো হয়।
এদিকে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অন্যান্য বিভাগের মতো সংকট তৈরি হলে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে আগের দিন ৯ ডিসেম্বর দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকা মুখী হতে পারে। ওই ৯ ডিসেম্বরই ঢাকায় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিএনপি কেন নয়াপল্টনে সমাবেশে করতে চায় তা সহজেই অনুমেয়। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। ওই হেফাজতে ইসলাম যে ধরণের বিশৃঙ্খল সৃস্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল সে ধরনের বিশঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। ১০ ডিসেম্বর আমাদের কর্মীরা, নেতারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকবে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেওয়া ও না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সেক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হলেও সেটা ঢাকা মহানগরের বাইরের কোনো স্থানে দেওয়া হতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা ইতোমধ্যেই বলছেন - বিএনপি ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ করতে চায়। সেটা ঢাকার মধ্যে সম্ভব নয়। এতো লোকের সমাবেশ করতে হলে পূর্বাচলে করতে পারে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকা শহরের বাইরের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে সমাবেশে করতে না দেওয়া বা সরাসরি সমাবেশের উপর নিষেধজ্ঞা দিতে চায় না সরকার।
আবার ঢাকার মধ্যে হেফাজত যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সরকার এমন কোনো সুযোগ কাউকে দেবে না বা ঝুকী নেবে না। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা সাংঘর্ষিক কোনো পরিস্থিতি এড়াতে প্রযোজনে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহসুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা সরকারের বিষয় না। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিষয়। একটি রাজনৈতিক দল সমাবেশ করতেই পারে ৷ সেখানে অনুমতি না পাওয়ার তো কিছু নেই ৷ কিন্তু কথা হচ্ছে তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করবে কি না। শান্তি নষ্ট, বিশৃঙ্খলা করবে না এই নিশ্চয়তার একটা বিষয় আছে ৷ কারণ অতীতে তারা নাশকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে ৷ এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ৷ এখানে সরকারের কোনো হন্তক্ষেপ নেই ৷ সরকার অনেক বড় বিষয়, এটা দেখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, সরকার না ৷ আর সরকার এতো দূর্বল না যে মাইকের ঘোষণায়; হুমকিতে সরকার পড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫, নভেম্বর ২৩, ২০২২
এসকে/এসএএইচ