লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে ফসলি ক্ষেতজুড়ে ছিল আমন ধান ও শীতকালীন সবজির আবাদ। কয়েকদিন পরেই আমন ধান কাটার ধুম পড়তো আর শীতের সবজি উঠতো হাট-বাজারে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের আমন ক্ষেত ও শীতের সবজি ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে ঘুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এমন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে। যদিও কৃষি বিভাগ বলেছে- ঝড়ে তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা।
ভবানীগঞ্জের পূর্ব চরমনসা গ্রামের সবজি চাষি আবদুর রশিদ চোখে মুখো দুঃস্বপ্ন। কারণ তার প্রায় আড়াই একরের সবজি ক্ষেত পানির নিচে। পানি সরে গেলেও কোনোভাবে রক্ষা করতে পারবেন না ফসল। এরই মধ্যে ক্ষেতের টমেটো গাছ মরা শুরু করেছে। পানি নেমে গেছে গাছগুলো মরে যাবে। আর পানির নিচে তলিয়ে থাকা ফুলকপির চারাও পচে যাবে।
চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। পুরোটাই এখন জলের ভাসছে।
আবদুর রশিদ বলেন, একমাস পর সবজি বাজারে তোলার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন পানির তলায় ডুবে গেছে। লাভের বদলে উল্টো লোকেশনে পড়লাম।
একই এলাকার কৃষক আবুল কালাম ৩৬ শতাংশ জমিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছেন, ঝড়ের আঘাতে কচি গাছের ডালপালা ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কিছু গাছ পানির নিচে ভেঙে পড়েছে। টমেটো ছাড়াও তার মুলা ক্ষেত, কপি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মো. আজাদ নামের আরেকজন কৃষক ৭২ শতাংশ জমিতে টমেটো, ৪৮ শতাংশ জমিতে কাঁচামরিচ, ৩৬ শতাংশ জমিতে মুলা ও ৯০ শতাংশ জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। ঝড়ের কবলে তার ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে আছে। গাছগুলোর পচে যাওয়ার শঙ্কা করছেন তিনি। এতে দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হবে তার।
ভবানীগঞ্জের মেয়ারবেড়ি সংলগ্ন পশ্চিম চর ভূতা গ্রামের কৃষক মো. সিরাজ দেড় কানি জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। পুরো ক্ষেতের কাঁচা ধান এখন পানিতে ভাসছে। এক তৃতীয়াংশ ধানও পাবেন না তিনি।
কৃষক সিরাজের ছেলে রাকিব হোসেন বলেন, সবেমাত্র ধান বের হয়েছে। এখনো পাকেনি। এরই মধ্যে ঝড়ে ধানগাছ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ধান কাটতেও শ্রমিক খরচ বেশি হবে। এমনিতেই ধান ক্ষেতে এবার ওষুধ খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে।
ভবানীগঞ্জের সবজি চাষি জালাল রহমান বলেন, আমি সীম, টমেটো, কপি, কাঁচা মরিচের আবাদ করেছি। সবগুলো ক্ষেতে পানি জমে আছে। সবজিগাছ পানির সঙ্গে লেগে আছে, সেগুলো পানির উপরে উঠিয়ে দিচ্ছি। তবে ক্ষেতে প্রচুর পানি থাকার কারণে অনেক গাছ মরে যাবে। আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কয়েকটি স্থানে ক্ষেতে থাকা আমন ধানের গাছ ভেঙে পড়েছে। আমন ক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে পানি জমে আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানসহ ফসলের ক্ষতি কম হবে।
তিনি আরও জানান, জেলাতে ৮৩ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। শীতের সবজির আবাদ হয়েছে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। ক্ষেতের আমন ধান এখনো কাঁচা। এ পর্যন্ত ৬ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
এসএম