ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বগুড়ায় আমনে বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
বগুড়ায় আমনে বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক

বগুড়া: বগুড়ার ১২টি উপজেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে এক লাখ ৮২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাষাবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে।

এবার রোপা-আমনে বাম্পার ফলনের আশায় রয়েছেন এ জেলার কৃষক।

বগুড়া উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার খ্যাত জেলা। রকমারি ফসল ফলানোর দিকে সারাদেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিত রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত ফসল রাজধানী ঢাকাসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ তালিকার শীর্ষে থাকে ধান, চাল ও নানা প্রজাতির সবজি।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধানচাষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।

কৃষক তাদের জমির সীমানা বোঝাতে খেতের বিভিন্ন প্রান্তে আইল ব্যবহার করে থাকেন। এখন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গাঢ় সবুজ ধান গাছে ঢাকা পড়েছে সেই আইলগুলো। চারদিকে বিরাজ করছে গাঢ় সবুজের অপার সমারোহ। বাতাসে আমন ধানের সবুজ ঢেউ কৃষকদের মন ভরিয়ে দিচ্ছে। ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজপাতা ও কাঁচা শীষ। কয়েকদিনের মধ্যেই শিষে দুধ-দানা পরিপক্ষ হতে শুরু করবে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। এ যেন রোপা আমন ধানে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

জেলায় এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোপা-আমন মৌসুমে ধান খেতে তেমন একটা প্রভাব হানতে পারেনি। আর প্রকৃতির কাছে হার মেনে নেয় না এ জেলার কৃষকরা। প্রতি বছর বন্য অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে নেমে পড়েন তারা। জমিতে নতুন করে ফসল ফলান। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে যান কৃষকরা। চোখের সমানেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় যমুনা তীরবর্তী এই জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় গেল বছর অল্প পরিমাণ জমির ক্ষতি হলেও এবার কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই। জেলায় এ বছর ধানে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষকরা জানান, বর্তমানে চাষাবাদ করা জমিতে রোপণকাল অনুযায়ী কখনও নিড়ানিও দিতে হচ্ছে। আবার প্রয়োগ করতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক। পানির অভাব দেখা দিলে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। বিগত রোপা আমনে উৎপাদিত ধানের ভাল দাম পাওয়ায় মনে অনেকটা আনন্দ নিয়েই কষ্টকর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।

বগুড়ার সদর ও শেরপুর উপজেলার কৃষক আসাদুজ্জামান, তোজাম মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, এ বছর সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট তেমন ছিল না বললেই চলে। বিদ্যুতে সমস্যা হলেও বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা অনেকটা কেটে উঠেছেন কৃষক। ফলে ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। ধানের সবল-সতেজ চারা এবং শীষ বের হয়েছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সামনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।

তারা আরও জানান, এখন প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষকরা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার এবং পার্চিং ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। কদিন পরেই ধানের সবুজ চারা এবং কাঁচা শিষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ।

শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও শেরপুর উপজেলার কৃষক আব্দুল আলিম, মাজেদুর রহমান, সিদ্দিক আলী বাংলানিউজকে জানান, কৃষিকাজই প্রধান কর্ম তাদের। বিগত মৌসুমে ধানের ফলন ও দাম ভালো পেয়েছেন। তাই তারা পর্যাপ্ত শ্রম দিচ্ছেন চাষের কাজে। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী কৃষকরা গত রোপা-আমন মৌসুমের তুলনায় এবার অনেক বেশি জমিতে এ মৌসুমের ধান লাগিয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমনের জমি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়া জেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১২টি উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৮২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। চাষাবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। জুলাই মাসের মধ্যবর্তী থেকে সময় থেকে কৃষকরা জমিতে এ ধান লাগিয়েছেন। অনেকে আগাম হিসেবে এর আগেও চাষাবাদ শুরু করেন। রোপণের সময়ের ওপরই ধান বা যে কোনো ফসলের বেড়ে উঠা নির্ভর করে।

তিনি আরও বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। এ জেলায় কৃষকরা ব্রি ধান- ৪৯, ৫১, ৭৫, রঞ্জিত, স্বর্ণা জাতের ধান বেশি চাষ করেছেন। এসব জাতের ধানের ফলনও ভাল হবে। এতে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও কৃষকরা বেশ লাভবান হতে পারবেন। সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ জেলার কৃষক।

জেলার কিছু এলাকায় আগাম লাগানো ধান গাছে এরই মধ্যে পাকও ধরেছে। কিছু কৃষক মোট চাষাবাদের প্রায় ১০ হেক্টর জমির নতুন ধান ঘরেও উঠিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।