বাঁশির সুর, হারমোনিয়াম আর ঢোল-তবলার তাল এবং নৃত্যের ঝংকার, মিলেমিশে যেন এক সুরের মূর্ছনা। এ সুরেই কণ্ঠ মিলিয়ে একদল শিল্পী গাইলেন রবীন্দ্রনাথের গান।
রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে সম্মেলনটি শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন শিল্পী ফাহমিদা খাতুন।
বোধনসংগীত ‘এই কথাটা ধরে রাখিস মুক্তি তোরে পেতেই হবে’ গানটির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সন্তোষ আলীর গ্রন্থনায় গীতিআলেখ্য ‘ফিরে চল মাটির টানে’ পরিবেশিত হয়।
গীতিআলেখ্যে পরিচালনা করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম। এছাড়া পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রপা মজুমদার। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যনন্দন, নৃত্যম্ নৃত্যশীলন ও ধৃতি নর্তনালয়।
সন্ধ্যায় শুরু হয় একক নৃত্যানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফারজানা আক্তার পপি, সেমন্তী মঞ্জরী, রোকাইয়া হাসিনা, অশোক সাহা, নুরুল মতিন সৈকত, আকলিমা খাতুন, শুক্লা পাল সেতু, ফেরদৌস আরা লিপি, মিলন ভট্টাচার্য, সুস্মিতা আহমেদ, প্রতীক এন্দ, পার্থ প্রতীম রায়, কল্লোল সেনগুপ্ত, নাইমা ইসলাম নাজ, মাইনুল ইসলাম, অনুপম বসাক তিলক, জীবিনা সঞ্চিতা হক, সমাপ্তি রায়, অদিতি মহসীন, আইরিন পারভীন অন্না, অসীম দত্ত ও শ্রাবণী মজুমদার।
সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদ চাঁদপুর শাখা। নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী মুনমুন আহমেদ। আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ।
উদ্বোধনী পর্বে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সংস্কৃতি আমাদের চিন্তাধারা, জীবনধারা ও একে অপরের প্রতি মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন।
তিনি বলেন, ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য বাঙালিরা ১৯৫২ সাল থেকেই রক্ত দিয়েছে। যখনই শাসক গোষ্ঠী বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বাঙালি তা প্রতিহত করেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরোয়ার আলী। তিনি বলেন, আমরা রবীন্দ্রনাথকে প্রাধান্য দিয়ে সমগ্র জাতির কাছে নিয়ে চাই। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির প্রাণের সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ এই অঞ্চলের পদ্মার পাড়ে বসে বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন। জাতীয় সংগীত বাংলার আপন।
তিনি বলেন, আজ বাংলার মানুষে মানুষে যে সম্প্রীতি, যে বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে উঠেছে, তার পেছনে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল হয়ে আব্দুল করীম রয়েছেন। আমরা সবাইকে ধারণ করতে চাই।
এ বছর রবীন্দ্র পদক ও গুণী সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছেন শিল্পী পাপিয়া সরোয়ার।
বিষয়টি জানিয়ে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শিল্পী তানিয়া মান্নান বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা জীবদ্দশায় তার হাতে পদকটি তুলে দিতে পারিনি। তবে তিনি পদক সম্পর্কে অবগত ছিলেন। রবীন্দ্র সম্মেলনের তৃতীয় দিন তাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
এ বছর তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র সম্মেলন চলবে। এতে ৫০০ এর বেশি শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক থাকছেন।
সম্মেলনে সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় নানা আয়োজন থাকছে। তিন দিনের সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গীতি-আলেখ্য, রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। রয়েছে গুণীজনের সুবচন।
অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আলোচনা হবে ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গে। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। এই আলোচনা অংশে সভাপতিত্ব করবেন রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহসভাপতি মফিদুল হক। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে বরাবরের মতো প্রকাশিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সংগীত সংস্কৃতি’।
সম্মেলনের তৃতীয় দিন এস ও এস পল্লী শ্যামলীতে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন সমাপনী অধিবেশনে শিল্পী রফিকুন নবী অতিথি হিসেবে থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
এফএইচ/এইচএ/