অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হবে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লুনা রুশদী ও ইংল্যান্ডপ্রবাসী সাগুফতা শারমীন তানিয়ার যৌথ গল্পগ্রন্থ ‘আনবাড়ি’। এর আগে, গতবছর বইমেলায় লুনা রুশদী অনূদিত অরুন্ধতী রায়ের ‘দ্য ব্রোকেন রিপাবলিক’ প্রকাশিত হয়।
ভিন্ন দুই মহাদেশে বসবাসরত বাংলাভাষার এ দুই প্রবাসী লেখককে নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয় তাদের যৌথ গল্পগ্রন্থ আনবাড়ি।
শিল্প-সাহিত্যের ওয়েব পোর্টাল ‘বাছবিচার’ গত ডিসেম্বর মাসে যৌথ এই গল্পগ্রন্থের কিছু অংশ প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের নিজস্ব ভূমিকায় বলে, ‘বিদেশে/প্রবাসে যাঁরা থাকেন তাঁরা ম্যাক্সিমাম সময়ে দেশ বিষয়ে চিন্তিত থাকেন বইলা লিখতে বসলেই এই বিষয়ে উৎকণ্ঠিত হইতে থাকেন। বিদেশে গেলেই দেশ ও দেশের মানুষ নিয়া লিখতে হবে, এইরকম একটা চাপও সম্ভবত তৈরি হয় অথবা বিদেশ বইলা যে কিছু নাই সেইটা দেশ সম্পর্কে বেশি বেশি বইলা প্রমাণ করা লাগে। এর বাইরে, বিদেশে থাকা বাংলাভাষার লেখকেরা যে বিদেশ নিয়াও গল্প লিখতে পারেন এবং লিখেন, তার এক্সজাম্পল হিসাবে পড়া যাইতে পারে, এই গ্রন্থের অংশ। ’
যৌথবই করার পেছনের গল্প কী, আর সেই গল্পকে কিভাবে সংগঠিত করা হলো জানতে চাইলে লন্ডন থেকে সাগুফতা শারমীন তানিয়া ই-মেইলযোগে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বইটা বের হবার কথা ছিল গতবছরই, কিন্তু দু’জনে মিলে লেখা, লুনার লেখাটা শেষ করতে দেরি হলো, ততদিনে আমিও কিছু লেখা যোগ করলাম, ঝালাই করলাম, ফলে সেটা গতবার বের হয়নি। লেখা নিয়ে, জীবনযাত্রা নিয়ে, একে অন্যের মনোভাব নিয়ে অনেক কথা বলেছি আমরা, আমাদের মনে হয়েছে অনেক কিছুই আমরা খানিকটা একই দৃষ্টিতে দেখি, দুইভাবে বললে ক্ষতি কী!’
যৌথ মানে কি শুধুই এমন যে একই মলাটে বিচ্ছিন্নভাবে দুইজনের কিছু লেখা, নাকি এগুলোর মধ্যে কোনো ইন্টারলিংক আছে?— এমন প্রশ্নের জবাবে তানিয়া বলেন, ‘আনবাড়ি লিখবার চিন্তা আমাদের বহুদিনের। লুনার সাথে এই নিয়ে অনেক হিহি-হাহা হয়েছে, দুইজনে দুই মহাদেশে থেকে, মাঝখানে মহাসমুদ্রের বিস্তার। যৌথ-যুগ্ম যাই বলা হোক, এটা এক মলাটে বন্দী দু’জনের বিচ্ছিন্ন লেখা, ইন্টারলিংক পরবাস। বইয়ের নামটা পরবাস অর্থে দেয়া, এই পরবাস নিজভূমেও হতে পারে, মিসফিটসদের জন্যে সব দেশই প্রবাস। শুধু প্রবাসের গল্প বললে হয়তো ভুল বলা হবে তাই। ’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে মেলবোর্ন থেকে লুনা রুশদী ই-মেইলযোগে বাংলানিউজকে বলেন, ‘তানিয়া আর আমি প্রায়ই কথা বলি বিভিন্ন রকম বিদেশবোধ নিয়ে। দু’জনেই পরবাসী আর প্রথম প্রজন্মের প্রবাসীদের মধ্যে একরকম ঝুলন্ত ভাব থাকে। কোথাও ঠিক মতন মিশ্ খাওয়া যায় না। আমরা আসলে যেখানে থাকি, সেখানে কখনোই পুরোপুরি থাকতে পারি না। এই বইয়ের চরিত্ররা আমাদের মতনই পরবাসী। ‘আনবাড়ি’ নামটা তানিয়ার দেয়া। প্রবাস অর্থে। তবে মূলত একটা বিচ্ছিন্নতাবোধের কথাই বলতে চেয়েছি। হয়তো সবারই কোনো না কোনো সময়ে এরকম লাগে, স্বদেশ বা বিদেশ ব্যাপার না। ’
আনবাড়ি’র প্রকাশক, শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বইটি প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। ইতোপূর্বে এ দুই মেধাবীর আলাদা আলাদা বই প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর। এবার একই মলাটে দু’জনকে বন্দী করতে পারার বৈশিষ্ট লাভ করতে যাচ্ছে সেই আনন্দ। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ দুই লেখকের ভক্ত, বইটি নিয়ে শুদ্ধস্বর আশাবাদী। ’
আনবাড়ি’র গল্প (বাংলানিউজে প্রকাশিত) পড়তে ক্লিক করুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৪