ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বইমেলায় বিশেষ মর্যাদায় মুক্তধারা প্রকাশনী

আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪
বইমেলায় বিশেষ মর্যাদায় মুক্তধারা প্রকাশনী

ঢাকা: ‘মুক্তধারা সাহিত্য প্রকাশনী’ এবার বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৪’এর আয়োজনে।

এবার বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে কোনো বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থার ঠাঁই হয়নি।

  বইমেলাকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো স্টল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আর বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থাগুলোর জন্য স্টল বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে, একাডেমির পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ‘মুক্তধারা’র ক্ষেত্রে।

মুক্তধারা একমাত্র বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা যারা বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে স্টল দিতে পেরেছে।

কেন পারলো এর জবাবে এর একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে বলে জানালেন বাংলা একাডেমির নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ১৯৭২ সালে বইমেলার গোড়াপত্তন হয় মুক্তধারা’র মাধ্যমে। সে কারণে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই বাংলা একাডেমি শুধুমাত্র মুক্তধারাকেই বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে স্টল করার অনুমতি দিয়েছে।

তিনি জানান, শুধু তাই-ই নয়, বইমেলা যে আজ মহীরুহ আকার ধারণ করেছে, এর পেছনেও মুক্তধারার অবদান। প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বটতলায় চটের ওপর মাত্র ৩২টি বই নিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এ বইয়ের সবগুলোই মূলত শরণার্থীদের লেখা।

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে ‘মুক্তধারা’র নাম ছিল ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ। এ বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান।

এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন সাহা একাই বইমেলা চালিয়ে যান। তার দেখাদেখি ১৯৭৬ সালে অন্যান্য প্রকাশকরাও অনুপ্রাণিত হয়ে বইমেলায় যুক্ত হন।

পরে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হয়, ‘বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি’। এ সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজনের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এ বছর তৎকালীন ক্ষমতাসীন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি।

এর পরের বছর ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র সূচনা হয়। এরপরই বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য় পূর্ণরূপ পায়। তারই পরিণত রূপ আজকের বইমেলা।

বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা জানান, আজকের বইমেলার পথিকৃত চিত্তরঞ্জন সাহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই বাংলা একাডেমি ‘মুক্তধারা’-কে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্টল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা একাডমির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কারণ, যার হাত ধরে বইমেলার শুরু, তাকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনকে ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী মনি জানালেন, আমার বই পড়ার অভ্যাস আগে থেকেই। সে কারণে বইমেলার ইতিহাসটা আমি জানি। সে হিসেবে বাংলা মুক্তধারা প্রকাশনা সংস্থাকে একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে স্টল করার সুযোগে দেওয়াকে আমি যথাযথ বলেই মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।