ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

কবিতার বই বেশি, কাটতি গল্প-উপন্যাসের

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
কবিতার বই বেশি, কাটতি গল্প-উপন্যাসের ছবি : দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: সপ্তাহের অন্য পাঁচদিনের মতোই কর্মদিবস। কিন্তু কে বলবে দিনটি বুধবার! লাইন দেখে তা মনে হওয়ার নয়।

তিন সারিতে ঢোকার দীর্ঘ লাইন। ভেতরে ঢুকে বই বগলদাবা করেই ফিরছেন বাড়ি।
 
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে থেকেই অগণিত লোক। তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। যারা মেলায় প্রবেশ করেছেন ফাল্গুনের পঞ্চম দিনের উদাস হাওয়ায় আনন্দেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে সূর্য কিরণ ছড়ানো কমিয়েছে, আকাশে গোধ‍ূলির আহ্বান।
 
মেলার ১৭তম দিন নতুন বই এসেছে ১৪০টি। এদিনও বেশি কবিতার বই। আর ১৭ দিনে সব মিলিয়ে বই সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯শ’ ২৯টি। এদিকে, গত ১৬ দিনে কবিতার বই এসেছে মোট ৪৮৪টি। গল্প ৩১৪টি এবং উপন্যাস ৩১০টি।
 
কবিতার বই এতো বেশি। ক্রেতারা বই কিনছেন, তবে কী ধরনের? এসব বিষয়ে প্রশ্ন ছিলো পাঠকের কাছে। আলিফ উল হক স্নাতক পড়ছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি রকিব হাসানের বই কিনলাম। উপন্যাস ও গল্পই আমার ভালোলাগে খুব। এছাড়া কবিতা বেশি পড়া হয় না। বই কিনলে গল্প-উপন্যাসই।  
 
মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মাদ কানিসুর রহমানের সঙ্গে দেখা মেলা ঘুরতে ঘুরতে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জীবনঘনিষ্ঠ বলে মানুষ গল্প-উপন্যাসের দিকে ঝুঁকছে। আর একটু কল্পকাহিনী পড়তে সায়েন্স ফিকশনে নজর দিচ্ছে। অথচ কবিতায় তারা এর একটিও হয়তো খুঁজে পাচ্ছে না! তাই তরুণ বলেন আর বুড়ো; তারা কবিতা পড়ছেন কম। তবে এ কথা সত্য যে কবিতার আলাদা একটি পাঠকশ্রেণী আছে। যারা কিনা কবিতা পড়েন, কিন্তু তা সংখ্যায় দিন দিন কমছে বলে আমি মনে করি।
 
‘আমি নিজেও কবিতা ভালোবাসি, কিন্তু কোনো কবির কবিতা নজর কাড়ছে না,’ যোগ করেন তিনি।
 
নালন্দা প্রকাশনীর কর্ণধার রেদওয়ানুর রহমান জুয়েলের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রকাশিত একটি নতুন বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সেটি মোস্তাক আহমেদের সায়েন্স ফিকশনধর্মী উপন্যাস ‘নিঃসঙ্গ জিরি’। কিন্তু আমি বলতে পারি এমন অনেক প্রকাশনী আছে যারা কবিতার বই বের করেছেন কিন্তু বলার মতো কোনো সংখ্যায় বিক্রি করতে পারেননি। এই যে এতো মানুষ দেখছেন হাতে বইয়ের প্যাকেট, তাদের মুখে হাসি। এসবের বেশির ভাগ গল্প-উপন্যাসের ক্রেতা।
 
তবুও কবিতার বই কেন এতো বের হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো এই বই বের করতে সময় কম লাগে, কিংবা লেখা/লেখকের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু আমি বলবো- সংখ্যা যতই বেশি হোক মানের দিকে নজর না দিলে কবিতা বা আর গল্প-উপন্যাস কোনোটাই ভালো চলবে না।
 
নিজেদের বিক্রি কম হলেও গল্পের চাহিদা বেশি জানিয়ে দ্য রয়েল পাবলিকেশন্সের সিনিয়র প্রতিনিধি মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বই এবার অন্যদের তুলনায় বিক্রি কম। তবে যাই বিক্রি হচ্ছে, তার সিংহভাগ গল্প। হোক সে গল্প গতবছরের, কিংবা তারও আগের। এখানেই পার্থক্য দেখি কবিতার সঙ্গে গল্প-উপন্যাসের।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি স্টলের প্রতিনিধি জানান, তারা অনেকগুলো কবিতার বই এবার এনেছেন। সে তুলনায় কম উপন্যাস-গল্পের সংখ্যা। কিন্তু কবিতা নয়, তাদের যা বিক্রি হচ্ছে সেগুলো উপন্যাস-গল্পই!
 
এদিকে বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে (একাডেমি প্রাঙ্গণ) শুরু হয় ‘শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। আলোচনায় অংশ নেন মঈনুল আহসান সাবের, জাকির তালুকদার, নুরুল করিম নাসিম এবং জয়দুল হোসেন। সভাপতিত্বে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। এছাড়া এদিন সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যাতে আরশী নগর বাউল সংগঠনের মানবান আনোয়ার শাহ, বাউল শরীফ শাহ, সুবাস সাই এবং বিমল সাই অংশ নেবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
আইএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।