ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বই কেনায় পাঠকের হাসি

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বই কেনায় পাঠকের হাসি ছবি: দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘মেলায় বই কিনতে ওয়ালেট বা ব্যাগ-পার্সে টাকা ভর্তি করে এনে প্রতিনিয়তই একটা চাপ থাকে, এই বুঝি খোয়া গেলো কিনা! এতো ভিড়, হাজারো মানুষের সমাগম, ভয় লাগাটা স্বাভাবিক। তবে মেলায় এসে শুধু নগদ অর্থ নয়, অনলাইনে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত বই কিনতে পারছেন, এটি স্বস্তির বিষয়’।



কথাগুলো বলছিলেন, মূর্ধান্য প্রকাশনার ব্যবস্থাপক শাহজাহান শাহ। তিনি যোগ করেন, ছোটখাটো সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও নগদ অর্থে বই কেনা-বেচা বাদে দৈনিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৬শ থেকে হাজার খানেক টাকা আসে।

উল্টোচিত্র জনপ্রিয় প্রকাশনী ঐতিহ্যের বেলায়। এর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল জানান, সাধারণ দিনে তাদের ছয় থেকে সাত হাজার টাকার বই বিক্রি হয় কেবলমাত্র মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। ছুটির দিনগুলোতে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে এ অংক প্রায় দেড়গুণে গিয়ে পৌঁছে।

এতো চাহিদা? এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজল বলেন, প্রকাশনাগুলোর বিক্রির ওপর এটি নির্ভর করছে। যাদের বিক্রি এমনিতেই বেশি তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়েও বিক্রি অনেক হয়। এখন এ সুবিধা একটি আধুনিক মাধ্যম।

অরেক জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা পাঠক সমাবেশে রয়েছে ভিসা ও মাস্টার কার্ডে বই কেনার সুযোগ। ঘুরতে এসে পছন্দের বইটি যতো দামই হোক, কিনে নেওয়ার প্রবণতা জাগায় ভিসা-মাস্টার কার্ডে অর্থ পরিশোধের সুযোগ, বলেন পাঠক সমাবেশের অন্যতম কর্ণধার শামস শুভ্র।

শুভ্র বাংলানিউজকে বলেন, এ সুবিধা কেবল আমরাই দিচ্ছি। কার্ড পাঞ্চ করেই কিনে ফেলা যাবে বই। নেই কোনো ঝক্কি-ঝামেলা। বই কিনতে হলে যে পকেটে নগদ অর্থ থাকতে হবে এ ধারণা এখন বদলে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন মেলা ঘুরে কেনাবেচার এমনই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা চোখে পড়ে।

সরু দৃষ্টিটা আরও বড় হয় যখন ওষুধ কোম্পানির তিন কর্মকর্তা বই কিনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ পরিশোধ করেন। মো. মাসুম মিয়া, মহসীন ও মোশাররফ হোসেন নামে এ তিনজন বাংলানিউজকে বলেন, বই কিনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বা অনলাইনে টাকা দেওয়ার সুযোগ খুবই উপকারী। হঠাৎ বই পছন্দ হলো কিনে ফেলতে পারলাম। এছাড়া নিরাপত্তার শঙ্কা অর্থাৎ এতো টাকা পকেটে নিয়ে ঘোরার কোনো প্রয়োজনও পড়লো না।

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন জনপ্রিয় অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিং। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই প্রযুক্তি গত কয়েক বছর আগে সীমিত পরিসরে প্রবেশ করে গ্রন্থমেলায়। যা এখন অর্ধেকের বেশি প্রকাশনা সংস্থা ব্যবহার করছেন প্রকাশকদের তথ্যানুযায়ী আনুমানিক ৭০ শতাংশ।

নবরাগ প্রকাশনীর কর্ণধার প্রকাশক এম কে মালেক বাংলানিউজকে বলেন, এ সুবিধা প্রকাশকরা ব্যবহার করছেন কারণ এতে ক্রেতা বাড়ে। দিনে দিনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বই কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যা আমরা কাজে লাগাচ্ছি। বিকাশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গ্রন্থমেলায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নেই প্রকাশনা সংস্থা জয়তী। কারণ জানতে চাইলে প্রকাশক মাজেদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, যেসব প্রকাশকরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করছেন তারা কিছু সুবিধা পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। সুবিধাগুলো হলো- কমিশন লাভ, গিফট পাওয়া প্রভৃতি। কিন্তু আমাদের এমন অ্যাকাউন্ট নেই। এতে দেখছি, ক্ষতিই হচ্ছে খানিকটা। মেলায় এ বছর অনেক পাঠক এসে বলছেন, আপনাদের কি মোবাইলে অর্থ পরিশোধ করা যায়! উত্তরে ‘না’ বলে দিলে কেউ কেউ বই নিতে পারছেন না।

তবে বেসরকারি প্রকাশনাগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কেনাবেচার সুযোগ রাখলেও নেই সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাডেমির এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনও সে ভাবনা মাথায় নেই বাংলা একাডেমির। কবে-কখন হবে কেউ বলতে পারেন না।

পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে জানা যায়, প্রকাশনীগুলোর মধ্যে অন্যপ্রকাশ, ঐতিহ্য, সময়, শোভা প্রকাশন, কাকলী, মাওলা, পাঠক সমাবেশ, দিব্য প্রকাশ, অনুপম, বিদ্যা প্রকাশ, ইত্যাদি, কথাপ্রকাশ, কলি প্রকাশনী, মূর্ধান্য, গতিধারা, মুক্তচিন্তা, সিঁড়ি প্রকাশন, অনার্য, মিজান পাবলিশার্স, বর্ণায়ন, রিদম প্রকাশনা, স্টুডেন্ট ওয়েজ, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, অনিন্দ, মেরিট ফেয়ার প্রকাশন, স্বরবৃত্ত, কথামালা প্রকাশন, সিসটেক, নবরাগ, বাঁধন পাবলিকেশন, বিজয় প্রকাশ, সৃজনী, সদরসহ অনেকগুলো প্রকাশনীতে মূল্য পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং।

গ্রন্থমেলার ১৮তম দিনে মেলার চালচিত্র
মেলায় এদিন ভিড় ছিলো অন্য আর চারটি কর্মদিবসের চেয়ে বেশি। অফিস বা ব্যবসা-বাণিজ্য শেষে বিকেলের পর থেকে কর্মজীবীদের সমাগম বাড়তে থাকে মেলায়। শুক্রবার থেকে আগামী তিনদিন যে ছুটি, তার একটা আলগা আমেজ পাওয়া গেছে এদিন। বিক্রেতারা বই বিক্রিতে ভালোই ব্যস্ত সময় পার করেছেন, আর ক্রেতাদের হাতেও ছিলো বিভিন্ন রঙের প্যাকেট।

মেলায় নাসিম-নাহিদ-লেনিন
স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম এদিন দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে মেলায় আসেন। এসে তিনি দাবি জানান, মেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের (নজরুলমঞ্চ) পরিসর বাড়ানোর। দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তিনি বলেন, শিশুরা স্কুলে বই পড়ার শিক্ষা নেবে এবং তা কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল বইপত্র পড়বে, এতেই তাদের সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে। মেধার বিকাশও ঘটবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ উল আলম লেনিন বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলা হলো আমাদের অন্তরের। এই মেলাকে কেন্দ্র করে অন্তরের বাণী শানিত হয়। এবারের মেলা বেশ ভালো হচ্ছে। সবার সন্তুষ্টি দেখে আমিও সন্তুষ্ট। সর্বপরি এটি সরকারের সাফল্য।

বৃহস্পতিবারের নতুন বই
বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র বলছে, এদিন ৯৪টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে এদিনও কবিতা সবচেয়ে বেশি ২৯টি, এরপর উপন্যাস ১৫, প্রবন্ধ ১৪, গল্প ৬, ছড়া ৪, জীবনী ৩, রচনাবলী ১ ও অন্যান্য।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রবন্ধ 'বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনা' বের করেছে সময় প্রকাশন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের ভ্রমণ কাহিনী বই 'আন্দামান হয়ে ভেনিসে' প্রকাশ করেছে পালক পাবলিশার্স। আসাদ চৌধুরীর কবিতার বই বিকলাঙ্গ দীর্ঘশ্বাসগুলো বের করেছে বটেশ্বর বর্ণন। আনোয়ারা সৈয়দ হকের কিশোর উপন্যাস 'সেই ভাষণটি শোনার পর'। অদিতি ফাল্গুনীর গল্পের বই 'প্রমথেশ প্রমিথিউস' প্রকাশ পেয়েছে ঐতিহ্য থেকে। সাযযাদ কাদিরের 'প্রেমের কবিতা' প্রকাশ করেছে বিভাস।

মেলার মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আহসান হাবীব জন্মশতবর্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারেক রেজা। আলোচনায় অংশ নেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি অসীম সাহা, কবি নাসির আহমেদ ও ড. অনু হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আহসান হাবীব কবি হিসেবে যেমন ছিলেন স্বতন্ত্র তেমনি সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে অনন্যসাধারণ। আমাদের আধুনিক কবিতার পাটাতন নির্মাণ ও সাহিত্যরুচি গঠনে তার অবদান কখনো বিস্মৃত হবার নয়।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন লতিফুর রহমান ও লায়লা পারভীন কেয়া। রবিন বসাকের নেতৃত্বে সাঈদ সিদ্দিকীর রচনা ও পরিচালনায় পরিবেশিত হয় পালাগান রূপচাঁন সুন্দরীর পালা। মো. মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন দৃষ্টি।

ছুটির দিন শুক্রবারে আয়োজন
শুক্রবার অর্থাৎ ফাল্গুনের সপ্তমদিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় ও চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।

এর আগে, সকাল ১০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। বিচারকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে থাকবেন শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা ও আবু বকর সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন রহিমা আখতার কল্পনা।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'রাধারমণ দত্ত: মৃত্যুশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শুভেন্দু ইমাম। আলোচনায় অংশ নেবেন মাহফুজুর রহমান, বিশ্বজিৎ রায় ও নৃপেন্দ্রলাল দাশ। সভাপতিত্ব করবেন কবি মোহাম্মদ সদিক।

এছাড়াও সন্ধ্যায় রয়েছে যথারীতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এদিকে, অমর একুশে ও বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তীতে ‘পাললিক বর্ণমালা’র চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন রয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে শিল্পী কালিদাস কর্মকারের মাসব্যাপী বিশেষ একক চিত্রপ্রদর্শনী। এর অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে ৪টায় একাডেমির মূল বিক্রয়-প্যাভিলিয়ন প্রাঙ্গণে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের সম্মুখে তিনি ভাষা শহীদদের স্মরণে ২১ মিনিটের বাঁশি বাদনের সঙ্গে একটি শিল্পকর্ম রচনা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
আইএ/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।