ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মেলায় রক্তের বাঁধন বুনছে পুলিশ

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
মেলায় রক্তের বাঁধন বুনছে পুলিশ ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?’।

হৃদয়ছোঁয়া এ গানটি মনে পড়বে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি দেখে।
 
প্রতিদিন রক্তের ব্যাপক চাহিদা মোকাবেলার মানসে এ কর্মসূচিতে নিয়োজিত রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ। প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যরা স্বেচ্ছায় আগতদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করছেন।
 
মেলার সোহরাওয়ার্দী অংশে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশে বড় পরিসরে রক্ত সংগ্রহের স্থান। এছাড়া প্রস্থান ফটকের পাশেও রয়েছে।
 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এ কর্মসূচি তদারকি করছেন এসআই সিদ্দিকুর রহমান।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দৈনিক অন্তত ৩০ ব্যাগ করে রক্ত সংগ্রহ করতে পারছি আমরা। ছুটির দিনে বেশি হয়। মেলার তৃতীয় দিন থেকে শুরু হওয়া আমাদের এ কর্মসূচিতে ১৭ দিনে (২০তম দিন, শনিবার পর্যন্ত) রক্ত পাওয়া গেছে ৩শ ৪৩ ব্যাগ। চাহিদার প্রেক্ষিতে আরও অন্তত ৫০ ব্যাগ রক্ত এনেছি আমরা বাইরে থেকে।
 
প্রাপ্তির চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই রক্ত একাধিক কাজে ব্যবহার করতে হয়। কারও ফুল ব্লাড লাগে, কারও প্লাজমা, কারও আবার প্লাজমা ছাড়া। পোড়া রোগী, ক্যানসার, ডেঙ্গু রোগীর স্বজনরাই এ পর্যন্ত বেশি এসেছেন, বলেন তিনি।
 
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, রক্তদানে আগ্রহী কেউ এলে প্রথমে তার অবস্থা চোখে দেখে বোঝার চেষ্টা করা হয়। এরপর ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ দেখে নেওয়া হয়। সংগ্রহ করা রক্ত রোগীর শরীরে দেওয়ার আগেও পরীক্ষা করে দেখা হয়, কোন রোগ-বালাই রয়েছে কিনা। বিশেষ করে রক্তবাহিত কোনো রোগ রয়েছে কিনা দেখা হয়। দাতা ও গ্রহীতার রক্তের মিলও থাকতে হবে।
 
কর্তব্যরত আনসার সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখানে রক্ত নেওয়ার পরপরই কোনো না কোনো হাসপাতালের লোক বা রোগীর স্বজনরা নিয়ে যান। এসে প্রেসক্রিপশন দেখাতে হবে। গতকাল (১৯ ফেব্রুয়ারি) ছয় মাসের এক শিশুর জন্য তিনব্যাগ রক্ত নিতে আসেন তার স্বজনরা। প্রতিদিনই এমন চাহিদা থাকে।
 
এখানে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ ব্যাগ রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও সে সুযোগ হয় না ব্যাপক চাহিদার কারণে। পাওয়ামাত্রই সেগুলো নিয়ে যান অপেক্ষারতরা, জানান সাইফুল।
 
প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে বলে জানান তিনি। বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে তাদের রক্ত নেওয়া হয় না। রক্তদানের পর দাতাকে পানি ও ট্যাং-এর শরবত খেতে দেওয়া হয় দুর্বলতা কাটাতে।
 
শুধু তাই নয়, প্রতিদিন চাহিদামতো রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যাতে দর্শনার্থীদের মধ্যে কেউ বিষয়টা জেনে রক্ত দিতে আসেন।
 
সিদ্দিক জানান, তাদের ফেসবুক পেজ রয়েছে। সেখানেও চাহিদা ও দানের আগ্রহের কথা জানানোর সুযোগ রয়েছে।
 
অনেক কর্মসূচিতে তাড়াহুড়োয় মাদকাসক্তদের রক্তও নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সে প্রসঙ্গে সিদ্দিক বলেন, মাদকাসক্তরা রক্ত দেন না, বিক্রি করেন। এখানে যেহেতু বিক্রির বিষয় নেই, তাই তারা আসেনও না সেভাবে। তবু আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকি। পুলিশের কর্মসূচি হওয়ায় মাদকাসক্তদের একটা ভয় কাজ করে এদিকে আসতে। সব মিলিয়ে আমরা কম সময়ে ঝুঁকিমুক্ত রক্ত নেওয়ার চেষ্টা করি।
 
তাদের ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘রক্তে মোরা বাঁধন গড়ি, রক্ত দেব জীবন ভরি। ’ পুলিশ সদস্যরা বলছেন, এভাবেই সবার মাঝে রক্তের সুসম্পর্ক বুনতে চান তারা। যাতে কেউ অন্তত রক্তের অভাবে না মারা যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এসকেএস/এসএস

** পুলিশকে বিনয়ী হয়ে কাজের আহ্বান
** আনিস আলমগীরের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে ঢাবি উপাচার্য

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।