নাটক বিষয়ক গবেষণাধর্মী বইয়ের চাহিদা থাকলেও তেমন বই নেই। নাট্যকর্মী ও এ বিষয়ের পাঠকদের অভিমত, নাটকের পা-পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশ হলে সেটি অবশ্যই ইতিবাচক।
তারা বলছেন, আমাদের দেশের শক্তিশালী শিল্প মাধ্যম হিসেবে নাটক সমাদৃত। কিন্তু এই বিষয়ে তেমন ভালো গবেষনা হয়নি।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত মেলায় নাটক বিষয়ক বই এসেছে প্রায় ৪০টি। তবে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, এই তালিকার বাইরেও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে তার বেশিরভাগই নাটকের পাণ্ডুলিপি।
এসব বইয়ের মধ্যে বাংলা প্রকাশ এনেছে সাধনা আহমেদের নাট্যগ্রন্থ ‘গাঙকুমারী’ এবং বেহুলা বাংলা এনেছে এই লেখকের ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’ ও ‘অংশুপট উপাখ্যান’ নামের আরেকটি নাট্যগ্রন্থ।
উৎস প্রকাশনী এনেছে অনন্ত হিরার লেখা দুটি নাট্যগ্রন্থ। এর মধ্যে একটি হলো ‘লোকনায়ক’ এবং অন্যটির নাম ‘কনডেমড সেল’। একই প্রকাশনী সংস্থা এনেছে নূনা আফরোজের লেখা নাট্যগ্রন্থ ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’।
শ্রাবণ প্রকাশনী এনেছে আশিস গোস্বামীর গবেষণাগ্রন্থ ‘শব্দাবলী স্টুডিও থিয়েটার কথা’। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স এনেছে অংশুমান ভৌমিকের লেখা নাটকের বই ‘বঙ্গনাট্যের সন্ধানে’। বিদ্যা প্রকাশ এনেছে প্রফেসর কর্নেল ডা. রণজিৎ সেনের নাটক ‘বিদ্রোহী কবি নজরুল’ ও ‘নৃত্যগীতি সমগ্র’ নামের দুটি নাট্যগ্রন্থ। থিয়েটার এনেছে সাজেদুল আউয়ালের ‘নাট্যচর্চা’সহ রামেন্দু মজুমদারের বেশ কিছু বই।
এছাড়া সময় প্রকাশন এনেছে মো. শফিকুল ইসলামের ‘নৈঃশব্দের ভালবাসা’, অন্বয় প্রকাশ এনেছে নুরুল ইসলামের ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’, সাম্প্রতিক প্রকাশনী এনেছে মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেনের ‘মুক্তিযুদ্ধের নাটক’, জুয়েল বুকস এনেছে নুরুল ইসলামের ‘বাড়ি নং ৭১ রোড নং ৫২’, সময় প্রকাশনী এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘ফজল শেখের শেষ ম্যাজিক ও অন্যান্য’, বিভাস এনেছে শফিকুল ইসলাম খানের ‘তুষের আগুনে’, শিলা প্রকাশনী এনেছে অশোক কুমার বিশ্বাসের ‘নাটক সমগ্র- ২’, আগামী প্রকাশনী এনেছে সৈয়দ জাহিদ হাসানের ‘কৃষ্ণকুমারী’, আগামী প্রকাশনী এনেছে ‘সোফোক্লিসের রাজা ইদিপাস’, ‘সোফোক্লিসের মুসাফির ইদিপাস’, ‘সোফোক্লিসের আন্তিগোনি’ নামে তিনটি বই। অনুবাদ করেছেন শাহনেওয়াজ কবির।
খুলনার নাট্যকর্মী সিরাজুল ইসলাম প্রতিবছর গ্রন্থমেলায় আসেন নতুন নাটকের বই কিনতে। যা নাগালে পান তাই কিনে নিয়ে যান। সারা বছর সেসব নাটকই মঞ্চে অভিনয়ের জন্য তৈরি করে তাদের দল।
কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের কথাকে তুলে ধরে এমন নাটক খুব কম। অনুবাদ নাটক পাওয়া যায়। কিছু কিছু নাটকের দলের সম্প্রতি করা নাটকের স্ক্রিপ্ট জোগাড় করে আমরা অভিনয় করি। তবে সত্যিকার অর্থে নাটকের বই নেই বললেই চলে। বিশেষ করে সৈয়দ শামসুল হক ও সেলিম আল দীনের প্রয়াণের পর নাট্য সাহিত্যে তৈরি হয় বিপুল শূন্যতা। তাদের পর নাট্য সাহিত্যে আর সেভাবে কেউ উঠে আসেননি। তারপরও কেউ কেউ লিখছেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করছেন ‘থিয়েটার’ পত্রিকা। তিনি বলেন, নাটকের বই একবারেই নগণ্য। নাটকের বই প্রকাশকরা বের করতে চান না। অথচ থিয়েটার কর্মীদের কাছে যেমন এর চাহিদা রয়েছে তেমনি সাহিত্যমান হিসেবেও পাঠকদের কাছে নাটকের গুরুত্ব রয়েছে।
‘তাই বিষয়ভিত্তিক এসব প্রকাশনার দিকেও প্রকাশকদের নজর দেয়া উচিত। মঞ্চ সফল নাটকের বই, সাহিত্যমূল্য সম্পন্ন নাটকের বই প্রকাশ পেলে তা বিক্রি হয়, পাঠক তা কিনে পড়েন। ’
ইদানিং কিছু কিছু প্রকাশক নাটকের বই প্রকাশে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
এইচএমএস/এমএ