রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) এভাবেই কেটে গেলো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার পঞ্চম দিন। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে কলকাতার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক এ বইয়ের মেলা।
৪৪তম বারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড।
মাত্র ২৫ মিনিটের বিমান যাত্রা। এর পর মোবাইল সিমের বিভ্রাট। এসব পেরিয়ে খিঁচড়ে থাকা মেজাজ নিয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই মন ভালো হয়ে গেল। বিশাল প্রাঙ্গণ জুড়ে মানুষের আনাগোনা। ছুটির বিকেলটা বইয়ের সঙ্গে সন্ধি করতেই এসেছিলেন তারা। এত মানুষের ভিড়ে মনে পড়ে গেলো বহুল চর্চিত তথ্যটি।
আন্তর্জাতিক প্রকাশক সংস্থা- আইপিএ এ মেলাকে লোক সমাগমের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলার স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতিটি যে শুধু ‘শুকনো কথায় চিড়ে ভেজানো না’, তার চাক্ষুষ প্রমাণ মিললো মেলায় যোগ দেওয়ার প্রথম সন্ধ্যাতেই। হাজারও মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে গেল- আমাদের অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুক্রবারের ভিড়ের কথা।
মেলায় প্রবেশ করেই দেখা গেল, কলকাতার বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব (গণমাধ্যম) ড. মো. মোফাকখারুল ইকবালের সঙ্গে। তিনি বললেন, প্রতি বছরই প্রচুর বাংলাদেশি আসেন মেলায়। শুধু লেখক নন, বইপ্রেমীরাও আসেন।
তিনি আরও বলেন, “এ বছর মেলার শেষ দিন (৯ ফেব্রুয়ারি) ‘বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ নিয়ে থাকছে দিনভর নানা আয়োজন। যাতে অংশ নেবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাংবাদিক-লেখক সুভাষ সিংহ রায়সহ আরও অনেকে। ”
একটু থেমে বললেন, এবার এসেছেন ঠিক আছে, কিন্তু সামনের মেলায় অবশ্যই আসতে হবে।
এর কারণ জানতে চাইলে বললেন, সামনের মেলায় থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মেলার আয়োজকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এরই ফাঁকে ভিড় জমে গেছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে। শান্তি নিকেতনের বাংলাদেশ ভবনের আদলে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটি।
বাংলা একাডেমির স্টলের দায়িত্বে একাডেমির কর্মকর্তা খালিদ মারুফ বাংলানিউজকে বলেন, ভালো ভিড় তো বটেই, বিক্রিও ভালো। প্রতি বছরই আগের বছরের চেয়ে বিক্রি বাড়ছে। আর বাংলা একাডেমির বিক্রি সবার শীর্ষে থাকে।
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের পাশেই আনন্দ পাবলিশার্সের বিশাল প্যাভিলিয়ন। সুনীল-সমরেশ-শীর্ষেন্দুসহ পশ্চিমবঙ্গের সব সাহিত্যিকের বই যেখানে মেলে সহজেই। কিন্তু প্রবেশটা মোটেও সহজ নয়। প্রবেশের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও, ভিড়ের কারণে তা হয়ে উঠেনি।
এর সামনে দাঁড়িয়েই কথা হলো সল্টলেকের মহিষবাতানের বাসিন্দা অরুণ রায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, আনন্দে প্রবেশের ‘আনন্দ’ পাওয়া কঠিন নয়, অসম্ভব। বেলা ১২টায় যখন মেলার গেট খুলে তখন এলে আরামে ঢুকতে পারবেন।
এরই ফাঁকে অভিযান পাবলিশার্সের প্যাভিলিয়নে ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন কবি রুদ্র গোস্বামী। তাকে বিরক্ত না করে প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার মারুফ হোসেনের সঙ্গে আলাপ হলো। বললেন, প্রথম রোববার তো। ভিড় তো দেখছেনই, বিক্রিও ভালো।
ভিড় ছিলো লিটল ম্যাগ কর্নারেও। সেখানে দেখা ঐহিকের সম্পাদক তমাল রায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, মেলা জমে উঠেছে। মানুষ আসছে। একে অপরের সঙ্গে আলাপ করছেন। এটাই তো মেলার মজা।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের দপ্তর থেকে জানা গেলো, মেলা প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এবারের থিম কান্ট্রি রাশিয়া। থিম প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি থিম গেট হয়েছে রাশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত ‘বলশয় থিয়েটার’র আদলে। এবারের বইমেলায় বিশেষ ভাবে উদযাপন করা হচ্ছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবার্ষিকী। বইমেলায় ঠাঁই পেয়েছে ৬০০ স্টল এবং ২০০ লিটল ম্যাগাজিন।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
ডিএন/এমএইচএম