ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

দুপুর গড়ালেও রাজশাহীতে সূর্যের দেখা নেই

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২৩
দুপুর গড়ালেও রাজশাহীতে সূর্যের দেখা নেই

রাজশাহী: ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে পদ্মা পাড়ের রাজশাহী। রাতের আড়মোড়া ভেঙে সবাই যখন চোখ মেলেছে ভোরের আলো তখনও ফোটেনি।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টা ৪৯ মিনিটে রাজশাহীতে সূর্যোদয় হয়েছে। তবে দুপুর ২টা গড়িয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। এখনও ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে আছে পুরো রাজশাহী। ফলে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে। আর এ কারণেই বেড়েছে শীতের দাপট।

সোমবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রাজশাহী। কুয়াশার কারণে ল্যাম্পপোস্টের আলো সড়কে ছড়াতে পারেনি। যেন ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির কুয়াশা ঝরেছে পুরো শহরে। মানুষের চলাচল কমে আসায় রাত ৮টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায় নগরের প্রধান প্রধান সড়ক। রাত যত গভীর হয় কুয়াশা ততই বাড়তে থাকে। ভোরে ঘন কুয়াশার সেই আস্তরণ যেন আবারও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে। এর সঙ্গে বয়ে চলা উত্তরের হিমেল হাওয়া শরীরে কাঁটা দিচ্ছিল। যতই দিন যাচ্ছে তাপমাত্রার পারদের ওঠানামা ততই যেন বেসামাল হয়ে পড়ছে। হঠাৎ ওপরে উঠছে, হঠাৎ নামছে। তবে এই ঘন কুয়াশা কেটে গেলে কামড় বসাবে শীত। বাড়বে জনদুর্ভোগ। এমনটাই পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে ঘন কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢাকা পড়লেও জীবিকার তাগিদে সেই সাত সকালেই বের হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তবে ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই মহাসড়কের দূরপাল্লার যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। সকালে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের নিচে নেমে আসায় সকালে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমেছে ট্রেনেরও। ফলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আন্তঃনগরসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। বিলম্বে চলার কারণে সময় অপচয় হচ্ছে  ট্রেন যাত্রীদের। গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহী-ঢাকা, ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা-রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর নির্ধারিত সময় ঠিক রাখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বৈরী আবহাওয়ায় রাজশাহী-ঢাকা ও ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় দেখা গেছে। আগের মতো এখন আর শিডিউলে চলছে না পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন।

আর রাজশাহীসহ গোটা উত্তরের সড়ক পথেও একই অবস্থা। দুর্ঘটনা এড়াতে ভোরে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ছোট-বড় যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে ধীর গতিতে। ‘ফগ লাইট’ ব্যবহার করেও চালকরা বাসের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। কুয়াশার কারণে অনেক সড়কের বাঁক চোখে পড়ছে না চালকদের।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার (২ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রোববার (১ জানুয়ারি) ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চলতি মৌসুমের প্রথম দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কেটেছে ডিসেম্বরেই। গত ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এরপর তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করলেও আর এতো নিচে নামেনি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ঘন কুয়াশা এবং ঠাণ্ডা বাতাসের কারণেই রাজশাহীতে তীব্র শীতে অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু রাজশাহীর ওপর দিয়ে কোনো শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে না। আর কোনো কোনো সময় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাচ্ছে। তখন শীত আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। যে কারণে অনেকেই ভাবছেন রাজশাহীতে হয়তো শৈত্যপ্রবাহ বইছে।  

তিনি বলেন, মূলত কুয়াশা কেটে গেলেই রাজশাহীতে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। তখন রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আবারও এক অংকে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে চলতি জানুয়ারি মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এ মাসে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করে তাপমাত্রা এক অংকে নেমে এলেও ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার আশঙ্কা নেই। এর মধ্যে একটি মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর জানুয়ারি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

এছাড়া জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কখনো কখনো দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৩
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।