ঢাকা: সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড, কচ গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান আর্চেলিকের সহযোগিতায় সোমবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বিএসইজেড) তাদের প্রথম অত্যাধুনিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান, কচ গ্রুপের ডিউরেবল গুডস কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ড. ফাতিহ কেমাল এবিচলিওগ্লু, জেমাল জান ডিনচার, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার, আর্চেলিক, নিহাত বাইজ, চিফ টেকনোলজি অফিসার, আর্চেলিক, এম এইচ এম ফাইরোজ, সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, আব্দুল আজিম চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব এবং নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটিসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডাররা এ মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত ছিলেন।
আর্চেলিক সিঙ্গারের নতুন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে, যা বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে। ১ লাখ ৩৫ হাজার বর্গমিটার জমিতে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পটির নকশা, নির্মাণ ও প্রকল্প পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি ফ্ল্যাগশিপ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট হবে। এ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট ৪ হাজার জন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। স্থানীয় সরবরাহকারীদের জন্য একটি কেন্দ্র তৈরি হবে যারা ভবিষ্যতে এ শিল্পখাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পখাতে আমদানিও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
নতুন এ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট চালুর মাধ্যমে সিঙ্গার টেকসই, আধুনিক ও উন্নতমানের নিজস্ব উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। এ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে সিঙ্গার বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার ও অন্যান্য এপ্লায়েন্স উৎপাদন করবে, যা কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াবে এবং বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করবে। আমাদের এ বিনিয়োগ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি আস্থারই প্রতিফলন। যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করবে এবং বিনিয়োগের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আর্চেলিকের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার জেমাল জান ডিনচার বলেন, আমরা ২০১৯ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশ অধিগ্রহণের পর সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এ বিনিয়োগ বাংলাদেশে আমাদের যাত্রায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। নতুন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের সহায়তায় আমরা বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য আমাদের পণ্যের ৯০ শতাংশ এ প্ল্যান্টে উৎপাদন করার পরিকল্পনা করছি। বাংলাদেশের জন্য আমাদের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে এবং আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে আরও উন্নত ফলাফল দেখার।
কচ গ্রুপ সব সময় টেকসই ব্যবসায়িক ধারণার পরিকল্পনা করে এবং এটিকে আমরা সমস্ত কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখি। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো হওয়ার জন্য আর্চেলিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য টেকসই বাণিজ্য সব মানুষের জন্য সব দেশে প্রসারিত করা, যা এ পৃথিবীর সবার জন্য অবদান রাখবে। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে।
তাই এ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের স্থাপত্য নকশা থেকে নির্মাণ, পুনঃব্যবহৃত উপাদান থেকে শক্তি এবং পানি উৎপাদন সুবিধাসহ সবকিছু বিবেচনায় রেখে নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও এম এইচ এম ফাইরোজ বলেন, সিঙ্গারের নতুন অত্যাধুনিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের উৎপাদন সুবিধা এলইইডির গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নির্মিত হবে। এলইইডি হলো একটি গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেট, যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত। আর্চেলিকের সহায়তায় সিঙ্গার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ও উৎপাদন প্রযুক্তির জ্ঞান নিয়ে আসবে। এটি বাংলাদেশকে স্বল্প কার্বন অর্থনীতিতে উত্তরণে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিঙ্গার গ্রিন ফ্যাক্টরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
টেকসই শক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য খোলা ছাদের পৃষ্ঠ ব্যবহার করে দিনের আলোর সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করে ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টটি ডিজাইন করা হবে। অন্যান্য প্ল্যান্টের তুলনায় এটি গড়ে ৫০ শতাংশ শক্তি সঞ্চয় করবে। প্ল্যান্টের ছাদে সৌর প্যানেলগুলো ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ রোধ করবে। সেচ সুবিধা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ব্যবহারের জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা হবে। স্থায়িত্ব ও গুণগতমান নিরীক্ষার জন্য পর্যবেক্ষণ সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। নির্মাণের সময় স্থানীয় ও পুনঃব্যবহৃত নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হবে।
কচ হোল্ডিং হলো তুরস্কের একমাত্র কোম্পানি, যা ফরচুন ৫০০ এর বৈশ্বিক তালিকায় প্রতিনিধিত্ব করেছে। কচ গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আর্চেলিক ২০১৯ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশকে অধিগ্রহণ করে। আর্চেলিক হলো ১২টি ব্র্যান্ডসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ভোক্তাবান্ধব কোম্পানিগুলোর একটি। বিশ্বব্যাপী এ প্রতিষ্ঠানের ৪৫ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। পৃথিবীর ৫২টি দেশে এদের শাখা অফিস রয়েছে। আর্চেলিকের আছে ২৯টি রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন সেন্টার। আর্চেলিকে কাজ করে ২ হাজার ৩০০ এরও বেশি গবেষক।
তুরস্ক ও বাংলাদেশ দুটি বন্ধু দেশ এবং উভয় দেশের জনগণ একই মূল্যবোধের অংশীদার। তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশ সিল্ক রোডের পাশের দেশগুলোর একটি, যা ২০৩৩ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। আর্চেলিক বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যা ও ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে ৷
আর্চেলিকের লক্ষ্য গবেষণা ও উন্নয়ন, বৈশ্বিক দক্ষতা, স্থানীয় দক্ষতা, শক্তিশালী ব্র্যান্ডের ঐতিহ্য এবং সিঙ্গার বাংলাদেশের বৃহৎ রিটেইল নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাজারে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠা। নিরবচ্ছিন্নভাবে স্টেকহোল্ডারদের জন্য ব্যবসায় বৈশ্বিক মান তৈরি করা ও বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সন্তোষজনক অভিজ্ঞতা প্রদান করাই আর্চেলিকের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২২
আরবি