শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের 'টাইমড আউট' নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত ক্রিকেটবিশ্ব। এতদিন যে কাজটি কোনো অধিনায়ক করেননি, তা করায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সমালোচনা করছেন অনেকে।
সাবেক অনেক ক্রিকেটার যেমন রমিজ রাজা, গৌতম গম্ভীর, ওয়াকার ইউনিস, মার্ক ওয়াহ 'টাইমড আউট'-কে ক্রিকেটের চেতনা বিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক হার্শা ভোগলের মতে, সাকিব কোনো ভুল করেননি। বরং ক্রিকেটীয় চেতনাকে দুর্বল যুক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম 'এক্স'-এ ম্যাথিউস-সাকিব ইস্যু শিরোনামে হার্শা একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'আপনাকে আম্পায়ারের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। তারা যদি বলেন যে দুই মিনিট পেরিয়ে গেছে, তাহলে তা-ই। কারণে তারা দুজনেই অনেক অভিজ্ঞ এবংভালো আম্পায়ার এবং তারা ভুল করার কথা নয়। '
'দ্বিতীয়ত, আইন সম্পর্কে অজ্ঞ হলে আত্মপক্ষ সমর্থন করা যায় না। যদি আইনে থাকে এবং তা লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে নিজেকে সমর্থন জানানো যায় না। সাকিবের (টাইমড আউটের) আবেদন করার অধিকার ছিল এবং আবেদন করবে কি করবে না তা ঠিক করে দেওয়ার আমরা কেউ নই। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং সে এভাবেই খেলতে চায়। '
ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলে যারা সাকিবের সমালোচনা করছেন তাদের একহাত নিতে হার্শা বলেন, 'এবং ক্রিকেটীয় চেতনা থেকে বেরিয়ে আসুন। যারা অজ্ঞ বা ভুল করে, তারা প্রায়ই এমন দুর্বল যুক্তি দাঁড় করায়। আইন আছে এবং সেই অনুযায়ী খেলতে হবে। এর বাইরে, কীভাবে খেলতে হবে তা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ম্যাথিউস এবং শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের হয়তো খারাপ লাগতে পারে এবং তারা রাগান্বিত হতেও পারে, কিন্তু খেলাটার আইন অনুযায়ী সে আউট। '
ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ২৫তম ওভারে। সাদিরা সামারাবিক্রমা সাকিবের বলে আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। কিন্তু যে হেলমেট নিয়ে তিনি নেমেছিলেন, সেটি নিয়ে সংশয় ছিল তার। পরে আরেকটি হেলমেট আনা হয়, তবে তাতেও সন্তুষ্ট হননি।
এর মধ্যে আম্পায়ারের কাছে এমসিসির আইনের ৪০.১.১ নম্বর ধারা অনুযায়ী আবেদন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পরে তিনি জানিয়েছেন, তাকে এসে এক ফিল্ডার মনে করিয়ে দিয়েছেন নিয়মটি। ওই নিয়মে বলা আছে, ‘কোনো ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়া বা অবসর নেওয়ার পর যে ব্যাটার আসবেন, তাকে অথবা অন্য ব্যাটারকে ৩ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বল মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। অন্যথায় যে ব্যাটসম্যান নামছেন, তাকে টাইমড আউট হতে হবে। ’
সাকিবের আবেদনে নিয়ম অনুযায়ী সাড়া দেন আম্পায়ার। কারণ ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ মিনিট। এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি ম্যাথিউজ। সাজঘরে ফেরার সময় হেলমেট ছুড়ে মারেন তিনি। এ ঘটনার পর ম্যাচেও কয়েকবার উত্তেজনা ছড়ায় দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে।
ম্যাচ শেষে ম্যাথিউস সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তার দাবি, হেলমেটের ফিতা ছিঁড়ে যাওয়ার সময় আরও পাঁচ সেকেন্ড সময় বাকি ছিল। কিন্তু চতুর্থ আম্পায়ার জানান, এর আগেই ২ মিনিট সময় পেরিয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউস বলেন, 'আমি ভুল কিছু করিনি। ক্রিজে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য আমার হাতে দুই মিনিট সময় ছিল, যেটা আমি করেছি। হেলমেটের ফিতা ছিঁড়ে গেল। আমি জানি না তখন মানুষের সাধারণ বুদ্ধিটুকু কোথায় ছিল। কারণ, অবশ্যই সাকিব ও বাংলাদেশ অসম্মানজনক আচরণ করেছে। তারা যদি তাদের ক্রিকেট এভাবে খেলতে চায় তাহলে বলব সেখানে ঘোর সমস্যা। অবশ্যই তারা তাদের মানটা নিচে নিয়ে গেছে। '
ম্যাচশেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন করেনি শ্রীলঙ্কা। এর প্রেক্ষিতে ম্যাথিউসের জবাব, 'আমরা তাদেরই সম্মান করি, যারা আমাদের সম্মান করে। তাদের খেলাটিকে সম্মান করতে হবে। আম্পায়ারসহ আমরা সবাই খেলাটির দূত। তাই সম্মান না দিলে, সাধারণ বুদ্ধিটুকু না খাটালে আর কীইবা বলতে পারি। '
তবে সমালোচনার জবাবে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, 'আমাদের একজন ফিল্ডার আমার কাছে এসে বলল, যদি আমি আবেদন করি তাহলে (ম্যাথিউস) সে আউট হয়ে যাবে। এরপর আমি আবেদন করি এবং আম্পায়ার আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি সিরিয়াস কি না। এটা নিয়মে আছে; জানি না সেটা ভুল নাকি সঠিক। মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধে আছি, তাই যা করার ছিল, সেটা করেছি আমি। এ নিয়ে বিতর্ক হবে। কিন্তু এটা যদি নিয়মে থাকে, আমি সেই সুযোগ নিতে পিছপা হব না। অবশ্যই এটা (টাইমড আউট) আমাদের সাহায্য করেছে সেটা অস্বীকার করবো না। '
ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেট নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ৬৫ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। এই জয়ে বাংলাদেশ ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার স্বপ্নও উজ্জ্বল হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২৩
এমএইচএম
My thoughts on the Mathews-Shakib issue.
— Harsha Bhogle (@bhogleharsha) November 7, 2023
You have to believe the umpires. If they say two minutes had elapsed, they had because these are vastly experienced, and very good, umpires and they are unlikely to make those mistakes.
Second, ignorance of the law is no defence. If…