ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিলগালা কক্ষে থাকছে ছাত্রলীগ, নীরব চবি প্রশাসন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
সিলগালা কক্ষে থাকছে ছাত্রলীগ, নীরব চবি প্রশাসন

চট্টগ্রাম: দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোট সংস্কার আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার পরপরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিষেধ অমান্য করেই থাকছেন আবাসিক হলে।

বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর হলের প্রতিটি কক্ষ সিলগালা করা হয়।

কিন্তু সব হল শিক্ষার্থীশূন্য হলেও ছাত্রদের হল শাহজালাল ও শাহ আমানত হল, এ এফ রহমান, আলাওল ও সোহরাওয়ার্দী হলের বিভিন্ন  থাকছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, ৬টি ছাত্র হলের ১৮৭টি কক্ষের সিলগালা ভেঙে ফেলেছে ছাত্রলীগ। এরমধ্যে শাহ আমানত হলে ৩০টি, সোহরাওয়ার্দী হলে ৩৫টি, শাহজালাল হলে ৪২টি, এ এফ রহমান হলে ১৫টি, আলাওল হলে ২৫টি ও আব্দুর রব হলে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়, মির্জা খবির সাদাফ, সাদেক হোসেন টিপু, যুগ্ম সম্পাদক সাহেদুল ইসলাম সাঈদ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ প্রতিম বড়ুয়া সহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মী থাকছেন। দিনের বেলা আনাগোনা কম থাকলেও রাতের আঁধারে হলের পিছন দিয়ে দেয়াল টপকে হলে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। শুধু তা-ই নয়, হলের ডাইনিং বন্ধ থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় শাহ আমানত হলের ডাইনিং খোলা রাখা হয়েছে।

এ ব্যপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও হলে কর্মরত একাধিক নিরাপত্তাকর্মী বাংলানিউজকে জানান, হল বন্ধ ঘোষণা করলেও এখনও বেশ কয়েকজন হলে থাকেন। তবে দিনের বেলায় তেমন একটা আওয়াজ শোনা যায় না। রাত হলেই তাদের উপস্থিতির শব্দ শোনা যায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাহ জালাল হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকছেন ছাত্রলীগ কর্মী আকিব জাবেদ। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের এ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া একই হলের ৪২৫ নম্বর কক্ষে থাকছেন জাহিদ শাকিল নামে ছাত্রলীগের আরেক কর্মী। তিনিও এই গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। একই অবস্থা পাশের শাহ আমানত হলেও। এ হলের শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তক সংগঠন চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের নেতা কর্মীদের অবস্থান। এ হলে ৩২২ নম্বর কক্ষে থাকছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। সোহরাওয়ার্দী হলের ১৪০ নম্বর কক্ষে থাকছেন বেলাল হোসেন। ইংরেজি বিভাগের এ শিক্ষার্থী যুক্ত  আছেন বগিভিত্তিক সংগঠন ‘বিজয়’ গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে। এছাড়া একই হলে, ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও সাবেক সহ সভাপতি সাদেক হোসেন টিপু ১৪১ কক্ষে এবং প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় থাকছেন ২৫৯ নম্বর কক্ষে।

সিলগালা ভেঙে হলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ক্যাম্পাসে থাকলেও হলে থাকছি না। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

বন্ধ হলে থাকা নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী শাকিল জাবেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে গত ১৮ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয় আবাসিক হলগুলো। দেশের এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ হল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। অনেকের বাড়ি দূর দূরান্তে হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত হলে থাকার অনুমতি চান। এ আবেদনে সাড়া না দিয়ে, উল্টো পুলিশের সহায়তায় তাদের হল থেকে বের দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লেও ছাত্রলীগের হল না ছাড়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

চবি সামশুন্নাহার হলের এক ছাত্রী বলেন, আমরা মেয়েরা হলে থাকতে চেয়েছিলাম। অথচ প্রশাসন চাপ প্রয়োগ করে হল ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ও হলে অবস্থান করছেন, তাদের ছবি ফেসবুকেও দেখতে পাচ্ছি। মূলত প্রশাসনই ছাত্রলীগকে হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুদিপ্ত চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে হলে থাকার সুযোগ করে দিতে হল থেকে শিক্ষর্থীদের বের করে দিয়েছে। তা না হলে বন্ধ হলে ছাত্রলীগ কিভাবে থাকে। এর পিছনে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা আছে।  

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর প্রভোস্টদের অবহিত করেছি। কিন্তু উনারা হলে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাননি। আমরা জানতে পেরেছি, হলের পেছনে গাছ বেয়ে হলে প্রবেশ করা যায়। ওই পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা হল খালি করে প্রভোস্টদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এমআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।