ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিক্ষক রোমান শুভ'র বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি চবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের 

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
শিক্ষক রোমান শুভ'র বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি চবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, গণহত্যাকে সমর্থন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি, মাদকের আসর বসানোসহ বেশকিছু অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ'র অব্যাহতি চেয়ে ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।  

বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন তারা।

 

লিখিত বক্তব্যে বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর হোসেন বৈশাখ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পতন হওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকাণ্ড এবং ২৪ এর গণহত্যাকে সমর্থন দেওয়া, ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে কাজ করা, ছাত্রদের নিজের বাসায় ডেকে মাদকের আসর বসানো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত জীবন ও আইন বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষকদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা, ছাত্রদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করা, ছাত্রলীগকে মদদ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা, ক্লাস পরিচালনাকালীন সময়ে এবং নিজ অফিসকক্ষে ডেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির  ট্যাগ দেওয়া, ক্লাসের মধ্যে ছাত্রদের টার্গেট করে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং সহকারী প্রক্টর থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাম্পাসের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক রোমান শুভর বিরুদ্ধে।  

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন- আইন বিভাগের শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ'র দ্রুতসময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।

২৯ আগস্টের মধ্যে শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি নিয়োগ দিতে হবে ও ভিসি কর্তৃক দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন নিয়োগ দিতে হবে। ভিসি নিয়োগের পূর্বে যদি হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, তাহলে ভিসি নিয়োগের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে বহিষ্কার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীসহ সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে ও প্রশাসনিক ভবনে সকল ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। অ্যালটমেন্ট দিয়ে আবাসিক হল খুলে দিতে হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। আটকে থাকা সকল রেজাল্ট প্রকাশ করার ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে সেন্ট্রাল ডাটাবেজের মাধ্যমে রেজাল্ট প্রকাশ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।  

সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম বলেন, রোমান শুভর জন্য বিভাগের কোনো অনিয়ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করা যেতো না।

শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ মাহমুদ বলেন, রোমান স্যার যখন সহকারী প্রক্টর ছিলন তখন আমাকে বেশ হয়রানি করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জারে ভুলে একটা রিয়েক্ট দেওয়াতে আমাকে কৈফিয়ত দিতে প্রক্টর অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। ৬ ঘণ্টা প্রক্টর অফিসে অপেক্ষা করার পরে স্যারের সাথে বিভাগে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়। দেখা করলে আমাকে সেসময় বিভিন্ন উসকানিমূলক কথা বলে শিবির ও জঙ্গি ট্যাগ দেওয়া হয়। এসময় আমার সঙ্গে আমার ব্যাচমেট ইফতিয়াজ তাহসিন এবং ওহিদ রশিদ ছিলেন।  

আইন বিভাগের ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসন রিয়াদ বলেন, আমরা রোমান শুভ স্যারকে না জানিয়ে সেন্ট মার্টিনে বনভোজনে যাওয়ার কারণে তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। পরে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলা হয়। এনিয়ে ফয়সালা করতে তার বাসায় ডেকে পাঠান। তিনি ক্ষমা চাওয়ার নাম করে টানা এক ঘণ্টা তার পা ধরে বসিয়ে রাখেন।  

নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তুলে তাকে পুলিশে দেন আইন বিভাগের এই শিক্ষক। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেন বলেন, ২০২২ সালে রাসুল (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে আন্দোলন করলে আমাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে তল্লাশির নামে হয়রানি করে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। তিন মাস আমি কারাগারে ছিলাম। পরে বেরিয়ে আসলে আমাকে আবারও একটা মিথ্যা অভিযোগ তুলে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।  

শিক্ষার্থী নুর হোসেন বৈশাখ বলেন, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতেন। তিনি ফলাফল আটকে দিবেন বলে সর্বদা হুমকি দিতেন। এই ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতো না।

তিনি আরও বলেন, রোমান শুভ স্যার মাদকের সঙ্গে সর্বদা জড়িত ছিল। তিনি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে মাদক আনাতেন। তিনি গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের উৎস বলে দিতেন। কোথায় মাদক আছে, কার কাছে আছে- সবকিছুই তিনি জানাতেন। শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মাদক আনতে বাধ্য করতেন। শিক্ষার্থীদের নিজের বাসায় নিয়ে মাদকের আড্ডায় বসাতেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।