ঢাকা, বুধবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম ওয়াসা: পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের ৩ বছরে অগ্রগতি ৬০ শতাংশ  

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৫
চট্টগ্রাম ওয়াসা: পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের ৩ বছরে অগ্রগতি ৬০ শতাংশ   ...

চট্টগ্রাম: নগরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে পয়োনিষ্কাশন ও স্যুয়ারেজ প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্পের ধীরগতি, ডলার সংকট সহ বিভিন্ন কারণে মাত্র তিন বছরে ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে প্রকল্পটির।

 

এখনও ৪০ শতাংশ কাজ বাকি, হাতে সময় আছে মাত্র দেড় বছর। যা শেষ করা অনেকটাই অসম্ভব- বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

ফলে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়তে পারে।  

ওয়াসা সূত্র জানায়, একনেকে অনুমোদনের প্রায় এক বছর পর ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় ওয়াসা। ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এ ছাড়া ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মাসেই কাজ শুরু হয় প্রকল্পটির।

পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পয়োনিষ্কাশন বর্জ্য পাইপলাইন ও খাল নালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা হালিশহর কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করা হবে। হালিশহর এলাকায় ১৬৫ একর জায়গায় প্রকল্পটির কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন স্থাপন করা হবে। বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ভৌত কাজের ৮০ শতাংশ এবং মেকানিক্যাল কাজের ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া পাইপলাইন স্থাপনের কাজও প্রায় ৪৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে। শুরুতে প্রতি ডলারে ৮০ টাকা হিসাব করে ওই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ডলারের দাম ১২০ টাকা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। পিডি নিয়োগ করা হয় পাঁচ মাস পর। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কারিগরি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পর তাদের বিদেশি কর্মীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর তারা নিজ দেশে চলে যান। এর মধ্যে করোনা মহামারি শুরু হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রাথমিক নকশা, ড্রয়িং, দরপত্র দলিল প্রণয়নের কাজ শেষ করা যায়নি। এ জন্য ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বানেও দেরি হয়।

তিনি বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের লক্ষ্য শুধু শহরকে পরিষ্কার রাখা নয় বরং একটি টেকসই পরিবেশ গড়ে তোলা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, এই প্রকল্প চট্টগ্রামকে একটি পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত করবে।

নগরীকে ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ভাগ করে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজে হাত দেয় ওয়াসা। প্রথম পর্যায়ের হালিশহর ক্যাচমেন্ট এরিয়ার কাজের নির্মাণব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এ  প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল জুন, ২০২৪ পর্যন্ত। সেই হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস, কনসালট্যান্ট নিয়োগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্ব, প্রকল্পের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তনসহ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিবেচনায় এনে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ২০২২ সালে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করে ওয়াসা। যদিও প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, তবে ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন দেয়নি সরকার।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বাংলানিউজকে জানান, নগরের বর্জ্যসমূহ পাইপলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় রান্না ঘর, গোসলের পানি এবং টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে গৃহস্থালি বর্জ্যসমূহ সরাসরি ক্যাশমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে। সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। তবে কারিগরি যাচাই-বাছাইয়ে নগরের প্রায় ৩০ শতাংশ এরিয়া স্যুয়ারেজ পাইপলাইন স্থাপনের অনুপযোগী। এক্ষেত্রে ফিকেল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্টের আওতায় টয়লেটের বর্জ্যসমূহ ভ্যাকুয়াম ট্রাক ও গাড়িতে করে পরিশোধনাগারে নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৫
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।