কলকাতা: পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানো ভারতের ওপর ছিল যুক্তরাষ্ট্র-চীনসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর চোখ রাঙানি। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ থেকে বিজয়ের ক’দিন আগ পর্যন্তও নানাভাবে শাসাতে থাকে ভারতকে।
পশ্চিমাদের হুমকি-ধামকি আর চোখ রাঙানির এসব তথ্য রয়েছে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার কার্য বিবরণীতে।
সেসব কার্য বিবরণী থেকে জানা যায়, একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দিল্লিকে হুমকি দিয়ে বলেন, ভারত যদি যুদ্ধবিরতিতে (একাত্তরের যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান লড়াই বিবেচনা করা হতো সেসময়) সাড়া না দেয়, তবে তাদেরকে চুক্তির বাধ্যবাধকতায় ফেলবে আমেরিকা।
নিক্সনের এই হুংকারের তীব্র বিরোধিতা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দলসহ সবকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ভারতের লোকসভা এবং রাজ্যসভায়ও আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের তুমুল বিরোধিতা ও সমালোচনা করা হয়। বিরোধী দলগুলো এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কড়া বিবৃতিও দাবি করে লোকসভায়।
লোকসভার নথিতে দেখা যায়, ওইদিন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন জনসংঘের প্রতিনিধি অটল বিহারী বাজপেয়ী, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (সিপিআই) নেতা এস এস ব্যানার্জি, কমিউনিস্ট পার্টি-মার্ক্সিস্টের (সিপিএম) নেতা জ্যোতির্ময় বসুসহ অনেক নেতা লোকসভায় আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানান।
সরকারের পক্ষ থেকে লোকসভার ভেতরে কোনো বিবৃতি না দেওয়া হলেও লোকসভার বাইরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতা ভগবৎ ঝাঁ আজাদ বলেন, “নিক্সনের মন্তব্য ‘সাম্রাজ্যবাদী’। ”
রাজ্যসভার নথি ঘেঁটে দেখা যায়, নিক্সন ও পশ্চিমাদের মনোভাব-বক্তব্য নিয়ে রাজ্যসভায়ও ব্যাপক আলোচনা হয়। সেখানে সোশালিস্ট পার্টির নেতা শ্রী রাজনারায়ণ নিক্সনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন। সিপিআই নেতা ভূপেশ গুপ্ত মন্তব্য করেন, ‘ভারতের উচিত আমেরিকাকে জানিয়ে দেওয়া যে, যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই ওঠে না। ’
অবশ্য, হানাদার পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষক নিক্সনরা রণহুংকার ছাড়লেও এতটুকুনও টলাতে পারেনি ভারতকে। প্রতিবেশী-বন্ধু ভারতের অকৃত্রিম সহযোগিতায়ই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উল্লাসে মাতে বীর বাঙালি।
বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২ , ২০১৫
ভিএস/এইচএ
** পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ছিল রাজধানী স্থানান্তরের খবর
**‘শুধু বুঝতে পেরেছিলাম, বড়ো কিছু ঘটতে চলছে’
** শিশুটি দৌড়াচ্ছিল আর বলছিল-‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’
** সেই গানের ইতিহাস: শোনো, একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের...
** ‘সেদিন ছিল আমাদেরও বিজয়ের দিন’