ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিরোধীদের ওয়াক আউটের মধ্যে বিধানসভায় সিঙ্গুর বিল পাস

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্টে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১১
বিরোধীদের ওয়াক আউটের মধ্যে বিধানসভায় সিঙ্গুর বিল পাস

কলকাতা: মঙ্গলবার বিরোধী শূণ্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ধ্বনি ভোটে পাস হয়েছে সিঙ্গুর বিল।

এদিন বেলা ১টা নাগাদ রাজ্য বিধানসভায় বিলটি পাশ করেন পরিয়দীয় ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি।

সিঙ্গুর বিলটি পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী বামফ্রন্ট বিধায়করা প্রবল প্রতিবাদ জানান এবং সেই সঙ্গে সব কৃষককে জমি ফিরত দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন।

বিরোধীদলের সহকারী নেতা সুভাষ নস্কর দাঁড়িয়ে ওঠে বলেন,‘ বামফ্রন্ট ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক নির্বিশেষে সব কৃষকে জমি ফিরত দেওয়ার কথা বলেছিল। ’

বামেদের জোরালো দাবির মুখে কার্যত অসহায় দেখাচ্ছিল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চে বসে থাকা সরকার পক্ষকে। এদিন বামপন্থীরা একা নন, জমি ফিরত দেওয়ার প্রশ্নে বিরোধীতায় সোচ্চার হয় সরকারি জোটের শরিক দল কংগ্রেস বিধায়করাও।

শেষ পর্যন্ত ধ্বনি ভোটে পাস হয়ে যায় বিলটি। যেহেতু এদিন কোনও সংশোধনী ছাড়াই বিলটি গৃহীত ও পাশ হয় তা নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ জানান স্পিকারের কাছে।

বিরোধী দলনেতা ডা. সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন,‘ বিধানসভায় সিঙ্গুর বিল পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির তাতে অনুমোদন লাগবে। কিন্তু এই বিল পরে জটিলতার সৃষ্টি করবে। আর সব কৃষকই জমি ফেরতের দাবি জানাবে। ’

তিনি আরও বলেন,‘ এই বিলের দ্বারা সিঙ্গুরের টাটা প্রকল্পের লিজ দেওয়া ৯৯৭ একর জমিই সরকারের হাতে আসবে। তাই সব জমিটাই খাস হয়ে যাবে। এই খাস জমি সরকার কৃষকদের লিজ বা পাট্টা দিতে পারবে। কিন্তু জমি সরকার অনিচ্ছুক কৃষকদের ফেরত দেওয়া সময় লিজ না পাট্টা দেবে তা বিলে উল্লেখ নেই। ’

তার এই বক্তব্যে পর বিধানসভায় ব্যাপক হইচই ও গ-গোলের সৃস্টি হয় একটা পর্যায়ে বিরোধীরা বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন।

এই সময় সিপিএমের বিধায়ক ও সাবেক ভূমি রাজস্বমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা বেরিয়ে যেতে চাইলে তাকে তৃণমুল বিধায়ক পরেশ পাল হাত দিয়ে জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। পরে তৃণমুল পরিষদীয় দলনেতা শোভনদেব চ্যাটার্জির হস্তক্ষেপে রেজ্জাক মোল্লা অধিবেশন কক্ষের বাইরে আসেন।

সিঙ্গুর বিল নিয়ে বিরোধীতা ‘নাটক’ করছে অভিযোগ করে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, ‘বিরোধীদের ওয়াক আউট সাজানো নাটক। এ থেকে কৃষক বিরোধী মনোভাব প্রমাণিত হয়। আর বিরোধীরা তা প্রমাণ করে দেখালেন। ’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এনিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেন,‘ জমি নীতি ঠিক করেছে সরকার। জোর করে জমি অধিগ্রহণ নয়। জমি লিজ দেব না। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমির স্বত্ব দেব। ’

এদিন বিল পাশকে স্বাগত জানাতে সিঙ্গুরের কৃষকরা এসেছিলেন বিধানসভা ভবনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করে তারা তাকে শুভেচ্ছা জানান।

রাজ্যপালের আপত্তি মানলো না সরকার

সিঙ্গুরের বিলকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের আপত্তিও মানেনি রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যপাল সরকারের প্রতিনিধিদের ডেকে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তিনি বিলের বিভিন্ন অসংগতি দূর করার পরামর্শ দেন। তারপরেও কোনরকম সংশোধন ছাড়াই রাজ্যপালে আপত্তি সত্তেও বিলটি পেশ করা হয়।

এদিন আবারও রাজ্যপাল বিধানসভায় বিলটি পেশ করার আগে  স্পিকার বিমান ব্যানার্জিকে ডেকে পাঠান। এই বিষয়ে তার তীব্র আপত্তি এবং অসন্তোষের কথা বলেন। স্পিকার তাকে জানান তার এবিষয়ে কিছু করার নেই।

এরপরই রাজ্যপাল নারায়ণন ডেকে পাঠান শিল্প ও পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্রকে। টানা ৪ ঘণ্টা তারা বৈঠক করেন।

রাজ্যপাল তাদের পরিষ্কার জানান, যাবতীয় আইন মেনে বিল পেশ করতে হবে। যাতে তার বিরুদ্ধে কোন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না আসে।

তিনি এও জানান, সিঙ্গুর নিয়ে অর্ডিনান্স জারি, বিধানসভা অধিবেশন এগিয়ে আনা ও সিঙ্গুর বিলের বিভিন্ন অসঙ্গতির প্রশ্নে বামফ্রন্টের তরফে যে সমস্ত আপত্তি ও অভিযোগ তোলা হয়েছে তা গুরুত্ব সহকারে যেন বিবেচনা করা হয়।

সিঙ্গুর বিল নিয়ে টাটাদের কড়া প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার বিধানসভায় পাশ হওয়া সিঙ্গুর বিল নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো টাটা কতৃপক্ষ। এদিন টাটার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

বিবৃতিতে তারা বলেছে,‘সিঙ্গুরে ৩০টি সহযোগী শিল্পের কাজ হচ্ছিল। সেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। মোট ১৭১ কোটি রুপি বিনিয়োগ করা হয়েছে সহযোগী শিল্পে। এছাড়াও ১৮ হাজার কোটি রুপি ব্যয় হয়েছে ন্যানো প্রকল্পে। পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছিল। ’

টাটা আরও বলেছে, ‘আমরা কারখানা বন্ধ করেছি বলে বিলে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ কেন বন্ধ হয়েছিল তা বিলে বলা হয়নি। পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না সিঙ্গুরে। তাই আমরা চলে যেতে বাধ্য হয়েছি।

ভারতীয় সময়:২২৫৫ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।