ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

হাজার ইতিহাসের সাক্ষী কলকাতার গঙ্গা (ভিডিও)

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
হাজার ইতিহাসের সাক্ষী কলকাতার গঙ্গা (ভিডিও) কলকাতার গঙ্গা। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: ‘বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের-হাহাকার শুনেও/নিঃশব্দে নীরবে, ও গঙ্গা তুমি বইছ কেন?/ নৈতিকতার স্খলন দেখেও, মানবতার পতন দেখেও/নির্লজ্জ অলস ভাবে বইছ কেন?’

ভুপেন হাজারিকার এই গানে বানভাসি গঙ্গার যেমন রূপ আছে, তেমনি আছে গঙ্গার অপার শান্ত-স্নিগ্ধ ও শীতলতা। সেগুলো নিয়েই আপন ছন্দে বয়ে চলেছে গঙ্গা।

তাইতো আবর্জনা থেকে উপসনা ‘মা গঙ্গা’, সবই বুকে টেনে নেয় সন্তানদের শিশুসুলভ আচরণ মনে করে।

নদীমাতৃক দেশ ভারতে গঙ্গা ‘দেবী মা’ রূপে পুজিত হন। তা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে। যেদিন থেকে ভারতীয় সভ্যতার স্বাদ পেয়েছিল আর্যরা, সেদিন থেকেই গঙ্গা পুজিত হন। আর এ নদীই বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মা নামে।

ইতিহাস বলে, মিশর, গ্রিক, ব্যবিলনের মত অঞ্চল থেকে বেদুইন হিসেবে এসেছিল আর্যরা। ভারতের জলবায়ু এবং অফুরন্ত খাদ্য ভাণ্ডার দেখে মুগ্ধ হয় তারা। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আর্য সভ্যতা। সিন্ধু নদীর তীরে তাদের বসবাস ছিল বলে আর্যদের বাসভূমির নাম হয় সিন্ধু সভ্যতা। এক সময় বরফ গলা জলে পুষ্ট নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার বড় একটি অংশ। আর যে নদীর কারণে ধ্বংস হয় আদি সভ্যতা, তার নামই হলো গঙ্গা। এর উৎসস্থল ভাগীরথী ও অলকানন্দার মোহনায়।

ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উদ্যম বাড়ে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে’। জীবজগতে জলের বিকল্প কিছু নেই, নদনদী পরিষ্কার থাকলে মানুষ সুস্থ থাকবে। সেজন্য দরকার নদীর গভীরতা বাড়ানো, ভাঙনরোধ এবং পাড়গুলো পরিষ্কার রাখা।

বলা হয়, বাঙালির চিন্তা গোটা ভারতের থেকে উন্নত। আর তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীও বিশ্বাস করেন। তার ভাষণে উঠে আসে ‘বেঙ্গল থিঙ্ক টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্ক টুমরো’। অর্থাৎ বাঙালি যা আজ ভাববে, ভারত তা আগামীকাল ভাবে। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গাপাড়ের সৌন্দার্য বর্ধনে জোর দেন।
হাওড়া ও কলকাতার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা, কলকাতার নগরয়ানে অন্যতম রূপ। সকালের ফ্রেশ অক্সিজেন নিতে মর্নিং ওয়াক থেকে শুরু করে সান্ধ্যকালীন প্রেম; সবই জমে ওঠে কলকাতার গঙ্গাপাড়ে।
গঙ্গার অন্যতম এলাকা প্রিন্সেপ ঘাট। নিত্যপূজার পাশাপাশি সকালের পর সন্ধ্যা হতেই প্রিন্সেপ ঘাটে প্রেমিকযুগল, বিভিন্ন পরিবার, ফুচকা, ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, আইসক্রিমপ্রেমী মানুষজনের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে। এসব জমজমাটে ভ্রুক্ষেপও নেই গঙ্গার। শান্ত নদীটি সমানে বয়ে চলেছে আপন ছন্দে।

গঙ্গার স্রোতে উথালপাতাল ঢেউ সাথে নিয়ে ঘাটে বাঁধা নৌকার সারিতে সওয়ারির অপেক্ষায় থাকে মাঝিরা। আধঘণ্টা ৩০০ রুপি, একঘণ্টায় ৫০০ রুপি। প্রিন্সেপ ঘাটে গঙ্গাকে স্পর্শ করার জন্য আছে চারটি ঘাট। তার মধ্যে দুটি ঘাট থেকে করা যায় নৌবিহার। প্রতি ঘাটে আছে ১৫টি নৌকা। উৎসববের সময় বাড়তি উল্লাস থাকে মাঝিদের।

এখানেই শেষ নয়। বাড়তি নজর থাকে ‘ইন্ডিয়ান নেভির’ নৌকা থেকে। অঞ্চল নজরে রাখে রাজ্য সরকারের জলপুলিশ ও ডুবুরী। ফলে নজরদারী থেকে নিরাপত্তায় বেষ্টিত থাকে প্রেমিকযুগল থেকে সব পরিবার। এতে কলকাতার গঙ্গার বাধাঁনো ঘাট শুধু কলকাতাবাসীর কাছে নয়, আকর্ষণ ভিন জেলা থেকে শুরু করে ভিন রাজ্যবাসীর কাছেও। হবে নাই বা কেনো? পূজা থেকে পার্বন; প্রতিদিনই নানান ঘটনার সাক্ষী হয়ে বয়ে চলছে কলকাতার গঙ্গা।

কলকাতাবাসীর কাছে শুধু আবেগ নয়, বরং গঙ্গা এক গর্বের নদী। কারণ গঙ্গা সাক্ষী হয়ে আছে হাজার হাজার ইতিহাসের। আর গঙ্গা তা নিজ বুকে করে বয়ে নিয়ে যাবে যুগ যুগ ধরে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
ভিএস/এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।