ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

গণহত্যা কাণ্ডে গ্রেফতারের নির্দেশ মমতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
গণহত্যা কাণ্ডে গ্রেফতারের নির্দেশ মমতার

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে গণহত্যার উত্তাপ এখনও কমেনি। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ওই গ্রামে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে তিনি রামপুরহাটে যান। সেখানে সার্কিট হাউজে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর রামপুরহাট হাসপাতালে গিয়ে আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন।

মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই গ্রামের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। নিহতদের পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ, আনারুলই ঘটনা ঘটিয়েছেন। সেই মতো তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এমন নির্দেশের কথা শুনে আনারুল এক সংবাদ মাধ্যমকে ফোনে জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ। আনারুলের বাড়ি সার্চ করে পুলিশ তাকে পায়নি। পুলিশের সার্চের সময় আনারুল অনুগামীরা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ করে। তাদের দাবি, মিথ্যা অভিযোগে দলই ফাঁসাচ্ছে নেতা আনারুলকে।

এদিকে, পুলিশ কর্তাদের কাছে নির্দেশ এসেছে গোটা বীরভূম থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে। অতিমাত্রায় দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামাতে যা যা অ্যাকশান নিতে হয় তাই নিতে হবে। পুড়ে যাওয়া বাড়ি ঠিক করে দিতে হবে এবং সরকারি খরপোশ দ্রুত নিহতদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বীরভুমের সব পুলিশ কর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।  

জানা গেছে, শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, রাজ্য সরকারকে বলব দোষীরা যেন দ্রুত সাজা পায়। এদিন একপ্রকার সুবিচার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একই দিনে মমতার পাশাপাশি সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এছাড়া সেখানে গিয়েছিন রাজ্য বিজেপি সভাপতির সুকান্তর নেতৃত্বে বিজেপির পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এই পরিস্থিতিতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য তৎপর ছিল প্রশাসন। যতক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী রামপুরহাটে ছিলেন কোনো বিরোধীদের পুলিশ ঢুকতে দেয়নি।

তারও আগে গণহত্যা কাণ্ড নিয়ে বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি বিধায়করা। অধ্যক্ষ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তারা। পরে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন সবাই। গণহত্যা কাণ্ড প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, আমি ওই গ্রামে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলে জেনেছি, ওখানকার নারী-শিশুদের পুড়িয়ে মারার আগে বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। তারপর বাড়ির দরজা বন্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন আমরা রাজনীতি করতে গেছি। সংখ্যালঘুদের ওই গ্রামে বিজেপি ভোট পায় না। বিধানসভায় মাত্র ১৮টা ভোট পেয়েছে। তাই আমরা রাজনীতি করতে যাইনি। গিয়েছিলাম মানবতার খাতিরে। সেখানে গিয়ে গ্রামের মানুষের মুখে যা শুনেছি, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাবে।

জানা যায়, সোমবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই গ্রামের নির্দিষ্ট ১০টা বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ ৮ জনের পুড়ে মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাতেই পুলিশ মৃতদেহগুলি দাফন করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ তৃণমূল নেতার খুনের বদলা নিতেই গ্রামে গণনিধন চলেছে। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই গণহত্যা।

ঘটনার পর থেকে তিনদিন কেটে গেলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি গ্রামে। বগটুই গ্রাম জুড়ে চলছে পুলিশের টহলদারী। জায়গায় জায়গায় রয়েছে পুলিশ পিকেট। মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে আসছেন জেনেও আতঙ্কে সকাল থেকে গ্রামবাসীদের ঘর ছাড়তে দেখা গিয়েছে। খবর পেয়েই ঘরছাড়া পরিবারগুলোকে বগটুই গ্রামে ফেরাতে যান ব্লক উন্নয়ন কর্তা (বিডিও) সৈকত বিশ্বাস। কিন্তু নিরাপত্তা নেই, এই দাবি করে ঘরে ফিরতে অস্বীকার করেন নিহত ৮ জনের পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, আমরা ফিরতে চাই। কিন্তু আমাদের জীবনের ঝুঁকি আছে। তাই আমাদের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা না দিলে যেতে পারব না। আমাদের জীবনের নিরাপত্তার দায় কে নেবে? চোখের সামনে আমার পরিবারকে পুড়তে দেখেছি। যদিও প্রশাসনের নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে গ্রামে ফিরেছে নিহত তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের পরিবার। সম্ভবত, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পর নিহত ৮ জনের পরিবারের সদস্যরা গ্রামে ফিরবে।

এর আগে গণহত্যার প্রতিবাদে বুধবার (২৩ মার্চ) বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বাম প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ঘুর পথে বাইকে গ্রামে পৌঁছতে পেরেছিলেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে গতকাল সেলিম বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে শাসক দলের লোকই জড়িত।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
ভিএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।